সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে

| শনিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে মশার উপদ্রব সহনীয় রাখতে ও অ্যাডিশ মশার বংশবিস্তার রোধে বদ্ধ জলাশয় ও নর্দমা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সচেতনতামূলক কর্মসূচিসহ যেসব কার্যক্রম চলমান রাখা প্রয়োজন, বর্তমানে সিটি করপোরেশন সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারছে বলে মনে হয় না। ফলে নগরীতে দেখা দিয়েছে মশার দৌরাত্ম্য।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, মশা নিধনের জন্য নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। আবার তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, শীতের তীব্রতা বাড়লে মশার দৌরাত্ম্য এমনিতেই কমে যাবে। মশারও মৃত্যু ঘটবে। এ জন্য ওষুধ ছিটানো বন্ধ থাকলেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বলা যায়, মূলত দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার সুযোগে শহরে আবারও বেড়েছে মশার যন্ত্রণা।
গত ২ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘দিন-রাত মশার কামড়, অতিষ্ঠ নগরবাসী। চসিকের ওষুধ কি অকার্যকর, পরীক্ষার উদ্যোগ’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের দাবি, মশক নিধনে প্রতি ওয়ার্ডে দৈনিক চারজন পরিচ্ছন্নকর্মী ওষুধ ছিটান। অথচ সাধারণ লোকজন বলছেন, ওষুধ ছিটাতে তারা দেখেন না। অতীতে স্থানীয় কাউন্সিলরগণ ওয়ার্ড পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি করতেন। কিন্তু গত চার মাস ধরে কাউন্সিলর না থাকায় মনিটরিংয়ের অভাবে এ কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বলছেন, চসিকের দাবি সত্য হলেও মশার উৎপাত কমছে না কেন। তবে কি ‘অকার্যকর’ ওষুধ ছিটনো হচ্ছে? এ অবস্থায় স্টোরে থাকা ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে চসিক। এতে আরো বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মশক নিধনের ওষুধ সংগ্রহ করে চসিক। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও ওষুধ সংগ্রহ করত। গত বছর ঢাকায় ছিটানো ওষুধ পরীক্ষা করে ‘অকার্যকর’ বলেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি)। ফলে ঢাকায় ‘অকার্যকর’ ঘোষিত ওষুধ চট্টগ্রামে কতটা কার্যকর হবে সেটা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ওঠে। অবশ্য চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বরাবরই দাবি করেন, কয়েক দফা পরীক্ষা শেষে সরবরাহকৃত ওষুধ স্টোরে ঢোকানো হয়। তাই অকার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই।
আসলে মশা এখন সারা পৃথিবীতেই জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মশাবাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জাপানিজ এনকেফালাইটিস ছাড়াও ম্যালেরিয়া ও গোদ উল্লেখযোগ্য। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যতে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ আরও বাড়বে। কাজেই মশক নিধনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা বা উদাসীন থাকার কোনো সুযোগ নেই। বরং বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কীভাবে মানুষকে এ ক্ষুদ্র কীটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা যায়, তা নিয়ে গবেষণা ও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে অবিরত।
বিশেষজ্ঞরা জনসচেতনতার বিষয়টিকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবছেন। নগরবাসী যদি তাদের নিজ নিজ বাসস্থান ও আশপাশ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে এবং মশা জন্মানোর ও এর বংশ বিস্তারের সুযোগ না দেয়, তাহলে মশার উপদ্রব থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, মশক নিয়ন্ত্রণে সুফল পেতে হলে ‘সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ গড়ে তুলতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া ঢাকঢোল পিটিয়ে যেনতেনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সেখান থেকে তেমন কোনো সুফল মিলবে না।
তাঁরা বলেন, কিউলেঙ মশার কামড়ে ফাইলেরিয়াসিস ও ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফাইলেরিয়াসিসে আক্রান্ত হতে হলে ১০ হাজারবার কিউলেঙ মশার কামড় খেতে হবে। আর যে কোনো মশার শরীরে ওয়েস্ট লাইন ভাইরাস থাকলে, ওই মশা কামড়ালেই চিকুনগুনিয়ার মতো এক ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হবে মানুষ।
সমপ্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) দাবি করেছে, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত একটি রোগী পেয়েছেন তারা। এটা ছড়িয়ে গেলে, কিউলেঙ মশাও বড় ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ ছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ ব্যাপার হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে