চট্টগ্রামে তিন ইউনিট (মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা) যুবলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নগর ও জেলার রাজনীতিতে নানানমুখী সমীকরণ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ পদ দুটি নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন গ্রুপের যুব ও ছাত্র নেতারা পাচ্ছেন তা নিয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে এখন দিন–রাত আলোচনা চলছে। এক সাথে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অতীতে আর কখনো হয়নি। এবার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামে যুবলীগের এই তিন ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৮ মে দক্ষিণ জেলা, ২৯ মে উত্তর জেলা এবং ৩০ মে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের এই তিন ইউনিটের এক একটির সম্মেলন হয়েছে আজ থেকে ১৫ থেকে ১৯ বছর আগে। বছরের পর বছর সম্মেলন না করে কমিটিতে থেকে যাওয়ার মানসিকতাকে তোয়াক্কা না করে কেন্দ্র থেকেই সরাসরি চট্টগ্রামে যুবলীগের তিন ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রামে যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে মহানগর ও জেলার সর্বত্র এখন প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। এবারের যুবলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে যে নতুন নেতৃত্ব আসবে তার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী–যুব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। তবে এবারের যুবলীগের নতুন কমিটির সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে মন্ত্রী–এমপিদের কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার বা তদ্বিরে কাজ হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। এবারের যুবলীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক হবেন–সম্পূর্ণ ব্যক্তি ইমেজ (সাংগঠনিক ক্লিন ইমেজের) নিয়ে। রাজপথে দলের সক্রিয় ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্ন সাবেক–বর্তমান যুবনেতা এবং ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতাদের মধ্য থেকেই আসন্ন মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হতে পারে এমন আভাস দিয়েছেন যুবলীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
গত ১২ মে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম তার বক্তৃতায় চট্টগ্রামে যুবলীগের পদপ্রত্যাশী এবং তাদের নেতাদের উদ্দেশ্যে নতুন বার্তা দিয়ে গেছেন। ব্যারিস্টাার শেখ ফজলে নাঈম তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘এখন আর আগের সেই যুবলীগ নেই। যুবলীগ এখন নতুন মাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে, মানবিক যুবলীগে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন যারা নতুন নেতৃত্বে আসতে চান–তাদের বায়োডাটা দেখে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে। এখানে গোপনে কোন কিছু করা হবেনা, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। তবে যুবলীগে কোন সন্ত্রাসী–মাস্তান–চাঁদাবাজদের স্থান হবেনা। কোনো কিছুর বিনিময়ে যুবলীগের নেতৃত্বে আসা যাবে না। ত্যাগী কর্মীর মূল্যায়ন অবশ্যই হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর–উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের অনেকের তাদের বায়োডাটা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে–উত্তর–দক্ষিণ থেকে নগর যুবলীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। বর্তমানে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির ৫ জন আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্যে দিদারুল আলম দিদার ও মাহবুবুল হক সুমন ছাড়া অন্য তিনজন আর যুবলীগ করতে আগ্রহী নন। মাহবুবুল হক সুমন এবং দিদারুল আলম দিদার সভাপতি পদে কেন্দ্রে তাদের বায়োডাটা জমা দিয়েছেন।
নগর যুবলীগের সভাপতি প্রত্যাশী বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন। যুবলীগের জন্য যারা আসলেই যোগ্য তাদের মূল্যায়ন হোক এটা তাঁর দাবি। তিনি আজাদীকে জানান, আমি দীর্ঘদিন যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, রাজপথে ছিলাম। আগামীদিনে রাজপথে যুবলীগের নেতৃত্ব দিতে চাই।
নগর যুবলীগের আরেক সভাপতি পদপ্রত্যাশী বিজিএমইএর প্রথম সহ সভাপতি–সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান যুবলীগ ত্যাগী–পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী যুবনেতাদের সংগঠন। আমি মনে করি এর প্রভাব চট্টগ্রামে নতুন কমিটিতেও পড়বে। আমি দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। কোন পদ–পদবী না থাকলেও রাজপথের আন্দোলন–সংগ্রাম থেকে দূর সরে যাইনি। যুবলীগকে ভালোবেসে একজন কর্মী হিসেবে সব সময় রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। নিজের যোগ্যতা–দক্ষতাকে কাজে লাগাতে আমি নগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী।
এবারের নগর যুবলীগের কমিটিতে রাজপথের ত্যাগী ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীরাই প্রাধান্য পাবেন এমনটাই আশা করছেন নগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু। যুবলীগের জন্য যারা আসলেই যোগ্য এবারের কমিটিতে বেছে বেছে তাদের মূল্যায়ন হবে এমনটা দাবি করে দেবাশীষ পাল দেবুর। আরেক সভাপতি প্রার্থী সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম দিদার। সবার মতো তিনিও চান–আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের ত্যাগী–মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন যুবনেতাদের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন করা হবে।
নগর যুবলীগের সভাপতি পদে আরো আছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিডিএর বোর্ড মেম্বার এম আর আজিম, ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরনজিৎ বড়ুয়া লাবু, ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, নগর যুবলীগের সাবেক সদস্য (চন্দন–মশিউর কমিটি) মো. হেলাল উদ্দিন, নগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম আইন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সুমন দেবনাথ, ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ওয়াহিদুল আলম শিমুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাজ্জাত হোসেন।
নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন, নগর যুবলীগের সদস্য সনৎ বড়ুয়া, জাবেদুল আলম সুমন, আসহাব রসুল জাহেদ, মাহবুব আলম আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রাজীব হাসান রাজন, ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি, আবু সায়েম সাদাত সুমন, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী প্রমুখ।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগ : দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশীরা হলেন–দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. ফারুক, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মিন্টু, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বড় উঠান ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম দিদার, পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এম এ রহীম, এম এ রহিম, শফিউল আজম শেফু, আকতার হোসেন।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা হলেন, বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান তালুকদার, বেসরকারি কারা পরির্দশক আবদুল হান্নান লিটন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. মাঈনুদ্দিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম ফরহাদুল আলম, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, মহিউদ্দিন মহি, আবু সাদাত সায়েম, মো. জহেদ, মো. আজিজ, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক রাজীব দাশ হিরো প্রমুখ।
উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন–উত্তর জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার বাবুল, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন, নুরুল মোস্তফা মানিক, মুজিবুর রহমান স্বপন, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হায়দার বাবু, অ্যাড. দীপক দত্ত, ইঞ্জিনিয়ার হাসান মুরাদ, আবুল বাশার, গোলাম কিবরিয়া।
আনোয়ারা সরকারি মডেল হাই স্কুল মাঠে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি ও কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান চৌধুরী ও রাজু দাশ হিরুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। প্রস্তুতি কমিটিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ ও সকল সাংগঠনিক ইউনিটের ও পৌরসভার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, আহবায়ক ও যুগ্ন আবায়কবৃন্দকে সদস্য হিসেবে অন্তভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সম্মেলনকে সফল করতে ১০টি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আন্দরকিল্লাস্থ দলীয় কার্যালয়ে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আছেন–উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন মো. মিজানুর রহমান মিজান বিএ, চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য রাশেদ খান মেনন, উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনজুর আলম, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আরজু সিকদার, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাহরাইন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল করিম, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তৈয়ব, শেখ ফরিদ, এস এম আল নোমান, এরশাদ খালেদ প্রমুখ।
বছরের পর বছর সম্মেলন না হয়ে শুধুমাত্র কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল চট্টগ্রামে যুবলীগের তিন ইউনিটে। এবার চট্টগ্রামে তিন ইউনিটে যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ মে। চট্টগ্রামে যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন। তবে অধিকাংশ নেতাকর্মীই দলীয় কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন।