‘আমার ছেলে ভালো রেজাল্ট করেছে। তবে এ রেজাল্ট তো আমাদের কোনো কাজে আসবে না; যেখানে ছেলেই বেঁচে নেই। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ এভাবে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত সবুজ মিয়ার মা সমেজা বেগম। শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়েছেন সবুজ। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সবুজের কৃতকার্যের খবরে স্বজন, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মাঝে আনন্দের পরিবর্তে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকায় গুলিতে মারা যান সবুজ।
শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়নের রূপার পাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে সবুজ। বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। সবুজের আয়েই চলত পাঁচ সদস্যের পরিবার। ছেলেকে হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে সবুজের পরিবার। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবুজ ছিলেন দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ের কিছুদিন পর বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। এরপর পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সবুজ।
স্থানীয় এক ওষুধের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন সবুজ। আর পড়াশোনা করতেন শ্রীবরদী সরকারি কলেজে। সেখান থেকেই এ বছর ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন। দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে, সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রাণ হারাণ সবুজ।
শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আলিফ উল্লাহ আহসান বলেন, সবুজ মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ছয় সদস্যের সংসারের খরচ বহন করে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে এই রেজাল্ট করা কম কথা নয়। তার ফলাফলে শিক্ষকসহ সহপাঠীরাও আনন্দিত। শুধু তার পরিবারের সদস্যরা এ আনন্দ নিতে পারছেন না, ছেলে হারানোর শোকে। আমরা তার শোকাহত অসহায় পরিবারের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।
সবুজের মা সমেজা বেগম বলেন, ছেলে নেই; আমরা চাই দোষীদের আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার করে ফাঁসি দেওয়া হোক।