সবুজ মাল্টায় রঙিন স্বপ্ন

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাতকানিয়া | শনিবার , ১১ নভেম্বর, ২০২৩ at ১০:০২ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চারা রোপণের কয়েক বছরের মধ্যে ফলন পাওয়ায় এবং লাভজনক হওয়ায় মাল্টা চাষ বাড়ছে। এখন অনেকে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করছে। লাভজনক হওয়ায় বছরের পর বছর বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। এখানে উৎপাদিত মাল্টা দেখতে সবুজ হলেও খেতে মিষ্টি ও রসালো। বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবুজ, সতেজ, ফরমালিনমুক্ত রসালো মাল্টার চাহিদাও রয়েছে। সাতকানিয়ার পাহাড়ি টিলা ও উঁচু এলাকাগুলোতে মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। কেউ কেউ শখের বসেও বাগান করেছে। এখন সবুজ মাল্টায় রঙিন স্বপ্ন বুনছে অনেকে। কৃষি অফিসের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ও উদ্বুদ্ধকরণের ফলে মাল্টা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাতকানিয়ার পাহাড়ি টিলা ও অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি গুলোতে পরিকল্পিতভাবে মাল্টা চাষ করলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হবে বলে জানিয়েছে মাল্টা চাষীরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, সাতকানিয়ার চরতি, মাদার্শা, সোনাকানিয়া, ছদাহা, ধর্মপুর, বাজালিয়া, এওচিয়া ও পুরানগড়সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ি টিলা ও সমতল জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে। চাষীদের মধ্যে কেউ কেউ স্বপ্রণোদিতভাবে মাল্টা চাষ করেছে। আবার অনেকে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকেছে। বর্তমানে সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২৭ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ হেক্টর বারি মাল্টা১ এবং ১ হেক্টর ভিয়েতনামী মাল্টা (বাউ মাল্টা)। বিগত কয়েক বছরে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৩ শত জন কৃষককে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এসব কৃষকদেরকে চারা, সার, কীটনাশক, স্প্রে মেশিন, সিকেচার ও বাডিং নাইফ প্রদান করা হয়।

উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ছোট হাতিয়া সোনাইছড়ি খালের সুইচ গেইট সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় মির্জারখীল কালা মিয়া পাড়ার মো. আবছারের মাল্টা বাগান সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বাগানজুড়ে পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ মাল্টা। ছোট ছোট গাছে মাল্টার ব্যাপক ফলন দেখে যেন মন জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ের বুকে মাল্টার বাগান দেখার জন্য এলাকার লোকজন ভিড় জমায়। এসময় মাল্টা বাগানে কাজ করছিল কৃষক মো. আবছার। মাল্টা গাছের পরিচর্যা করতে করতে আবছার জানান, সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়ার ইতি টেনে চাকরিতে চলে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন চাকরি করেও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরে চাকরি ছেড়ে এলাকায় এসে চাষাবাদ করেছি। তাতেও তেমন সুবিধা করতে পারিনি। সর্বশেষ এলাকায় একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসার পাশাপাশি সুইচ গেইট সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় পেঁপে বাগান করি। পেঁপে চাষে ভাল লাভ পেয়েছি। এর মধ্যে ইউটিউবে দেশের বিভিন্নস্থানে মাল্টা চাষের সফলতার খবর দেখে এখন থেকে চার বছর আগে আমি পেঁপে চাষ বাদ দিয়ে মাল্টা বাগান শুরু করি। প্রথমে আমি এক একর জায়গায় মাল্টা বাগান করি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কিছু চারা, সার ও সেচের জন্য গভীর নলকূপ দিয়েছে। বাগান করার দ্বিতীয় বছর থেকে কিছু কিছু গাছ ফলন দিতে শুরু করে। তৃতীয় বছর ভাল ফলন হয়েছে। মাল্টা বিক্রি করে লাভও পেয়েছি। চলতি বছর সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। এ বছর ইতিমধ্যে এক লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। আরো ২০৩০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো। চারা বড় হওয়ার সাথে সাথে মাল্টার ফলনও বাড়ছে। আগামী বছর থেকে আরো অধিক ফলন পাবো। ব্যবসার পাশাপাশি বাগানের পরিচর্যা করে সময় কেটে যায়। এখন মাল্টা বাগান নিয়ে আমার সব স্বপ্ন। আশা করছি সবুজ মাল্টার এ বাগান একদিন আমার জীবন রাঙাবে। আগামীতে বাগানের পরিধি আরো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মো. আবছার উদ্দিন আরো জানান, আমি যেখানে বাগান করেছি সেখানে নিয়মিত হাতি আসে। হাতি অন্যান্য ফসলের ক্ষতি করলেও মাল্টা, কমলাসহ লেবু জাতীয় ফসলের তেমন ক্ষতি করেনা।

চরতি ইউনিয়নের দক্ষিণ তুলাতলির মাল্টা চাষী জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমার ভগ্নিপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমানসহ যৌথভাবে ৮ কানি জমিতে মাল্টা ও আম বাগান করেছি। বাগানে ৫ শটি মাল্টা গাছ রয়েছে। এখন থেকে চার বছর আগে মাল্টা বাগান করেছি। সরকারিভাবেও কিছু চারা দিয়েছে। চারা রোপণের দ্বিতীয় বছর থেকে ফলন পেয়েছি। এবছর ফলন কম হয়েছে। গাছে প্রচুর ফুল ছিল কিন্তু সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। এবছর ৮০৯০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। চারা বড় হওয়ার সাথে সাথে ফলন আরো বৃদ্ধি পাবে। আমার বিশ্বাস মাল্টা চাষ অনেক লাভজনক হবে।

এওচিয়ার ছনখোলা এলাকার মাল্টা চাষী মো. আজিজ জানান, আমি দুই বছর আগে ১৩ গন্ডা জমিতে মাল্টা চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাল্টা চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে চারা ও সার প্রদান করেছে। এবছর থেকে ফলন দেয়া শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চারা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, উপজেলার সোনাকানিয়া, মাদার্শা, এওচিয়া, চরতি, ধর্মপুর, বাজালিয়া, পুরানগড় ও ছদাহাসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৭ হেক্টর মাল্টা বাগান রয়েছে। চারা রোপণের কয়েক বছর পর থেকে ফলন দেয়া শুরু হওয়ায় এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেকে। এখানে উৎপাদিত বিষমুক্ত, সবুজ, সতেজ ও রসালো মাল্টা খেতেও বেশ সুস্বাদু। মাল্টা চাষীদেরকে সরকারি ভাবে চারা, সার, কীটনাশক প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদেরকে মাল্টা চাষে আরো আগ্রহী করে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশকে ধ্বংস করতে বিএনপি আগুন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের আশ্রয় নিয়েছে
পরবর্তী নিবন্ধকাটিরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল