বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি গতিশীল আছে, মানুষের জীবনমান সহজ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার সহযোগিতায় এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবে সরকার। গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেট ব্রিটেন থেকে শুরু করে আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ। প্রতিটি জায়গায়ই কিন্তু ইকোনমিক রিসেশন। এবং ব্রিটেন তো নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছে তাদের ইকোনমিক রিসেশন চলছে। সেই অবস্থায় আমরা এখনও আমাদের অর্থনীতি গতিশীল আছে, চলমান আছে। তবে সকলের সহযোগিতায় অবশ্যই আমরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব।
করোনাভাইরাস মহামারী থেকে উত্তরণের সময়ে যুদ্ধের কারণে দেখা দেওয়া বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা আসার ফলে প্রত্যেকটা জিনিস যা বাংলাদেশের বাইরে থেকে কিনতে হয় তার দাম ও পরিবহন মূল্য বেড়ে গিয়েছে। তারপরও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি যতদূর সম্ভব আমাদের দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয় তার জন্য যথাযথভাবে সেগুলো যেখান থেকে পারছি, যত দাম দিয়ে হোক আমরা ক্রয় করার চেষ্টা করছি এবং মানুষের জীবনমান যাতে সহজভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া পররাষ্ট্র নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ মেনে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে সাধারণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার, বলেন তিনি। যার শুভ ফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছে, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শুধু একটি কথা বলব আমরা কারও সাথে যুদ্ধ করব না। আমরা শান্তি চাই। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে এই নীতি শিখিয়েছেন। সেনাবাহিনীর নতুন নতুন ঘাঁটি তৈরি থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ আমরা চাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে একটা সময়োপযোগী হোক। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক একেবারে যেভাবে জাতির পিতা আমাদেরকে প্রতিরক্ষা নীতি করে দিয়ে গেছেন তারই ভিত্তিতে ফোর্সেস গোল-২০৩০ করে সেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীকে আমরা শক্তিশালী করে দিচ্ছি।
নৌ বাহিনীকে ত্রি মাত্রিক করা এবং সমুদ্রসীমায় অধিকার অর্জনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি নিয়ে যে সমস্যা ছিল ভারতের সাথে সেটা আমরা সমাধান করে আমরা এনক্লেভ এঙচেঞ্জ করেছি। এটাও একটা দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কাছে যে শান্তিপূর্ণভাবে কোনো দেশও এভাবে কেউ ছিটমহল বিনিময় করতে পারেনি। কিন্তু আমরা তা করেছি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন সর্ব্বোচ্চ শান্তিরক্ষী হিসেবে আমাদের অবস্থান করে নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জণগণের বাহিনী তথা পিপলস আর্মি’। আমি বিশ্বাস করি সত্যিই আমাদের সেনাবাহিনী এখন পিপলস আর্মি কারণ যেকোনো দুর্যোগে অথবা যেকোনো দুর্ঘটনায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদেরকে সহযোগিতা করে যায় সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে দেশের নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপর আবার অনেক ঘটনা ঘটে যায়। আমরা সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ এ সরকার গঠন করে বাংলার জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমরা এ পর্যন্ত ক্ষমতায় আছি। বাংলাদেশে অন্তত গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে। আর এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পারছি। মানুষের জীবনমান উন্নত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ, সত্যি কথা বলতে কি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে করোনা এবং এ যুদ্ধ আর স্যাংশান এটা আমাদেরকে অনেকটা সমস্যায় ফেলছে। এরই মধ্যে যার যেখানে যতটুকু জমি আছে সেখানে নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে হবে- এমন নির্দেশনার কথাও অনুষ্ঠানে আবারও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।