গার্মেন্টস শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে একটি সমবায় সমিতি। নগরের চান্দগাঁও থানাধীন সিঅ্যান্ডবি এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করা চান্দগাঁও প্রাইম শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামের প্রতিষ্ঠানটিতে গতকাল তালা ঝুলিয়ে সবাই পালিয়ে গেছে। সর্বস্ব হারানোর দুঃখে কাতর শত শত গার্মেন্টস শ্রমিক গতকাল অফিসটি ঘিরে রাখে। তারা তাদের টাকাগুলো উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চান্দগাঁও থানাধীন সিঅ্যান্ডবি এলাকার শাপলা ক্লাব সংলগ্ন ইউনুচ ফকির মার্কেটের দোতলায় অফিস স্থাপন করে চান্দগাঁও প্রাইম শ্রমজীবী সমবায় সমিতি। তারা ব্যাংকের মতো বিভিন্ন ধরনের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। ডিপিএস ও এককালীন টাকা জমা রেখে লোভনীয় মুনাফা প্রদানের ঘোষণা দেয়। গভ. রেজি নম্বর ১২৬০২ উল্লেখ থাকায় সাধারণ গার্মেন্টস শ্রমিকেরা এটিকে সরকারের অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেবে টাকা জমা রাখে।
২০০২ সাল থেকে প্রায় বাইশ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি নানা লোভনীয় অফার দেয়। রাশেদুল ইসলাম রাজু নামে কুমিল্লা অঞ্চলের এক ব্যক্তি নিজেকে চেয়ারম্যান বানিয়ে নিয়োগ দেন এমও, এমএম, জিএমসহ নানা পদের কর্মকর্তা–কর্মচারী। নগরীর মনসুরাবাদের খালেক বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় ওই কোম্পানি আলাদা কার্যালয় স্থাপন করে এবং গার্মেন্টস শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের টার্গেট করে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি মাসিক ভিত্তিতে টাকা জমা নিয়ে ৩ বছর ও ৫ বছর মেয়াদি ডিপিএস চালু করে। এতে এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংকের টাকা জমা রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিকেরা। ফিক্সড ডিপোজিটের নামেও টাকা জমা রাখা হয়। ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রাখা অনেক লোক গতকাল অফিসটির সামনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কোম্পানির শুরুতে বেশি লোকজন না থাকলেও ক্রমে এটির সাথে প্রচুর লোকজন জড়িয়ে পড়ে। মাসিক ভিত্তিতে টাকা রাখা এবং মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়ায় দিনে দিনে কোম্পানিটি অনেকের আস্থা অর্জন করে। এতে শত শত গার্মেন্টস শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ মাসের বেতন পেয়ে শুরুতে ডিপিএসের টাকা জমা দিয়ে আসছিলেন। এক হাজারের বেশি গার্মেন্টস শ্রমিক এখানে টাকা রাখতেন বলে গতকাল মনোয়ারা বেগম নামে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক জানান। তিনি প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে জমা রাখছিলেন। প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে রেখে মেয়াদ শেষে মনোয়ারার ১৬ হাজার টাকা লাভসহ ৮৮ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। গত ডিসেম্বরে তার ডিপিএসের মেয়াদ শেষ হলে তিনি টাকা ওঠাতে যান। কিন্তু তার কাছ থেকে টাকা পরিশোধে তিন মাসের সময় চাওয়া হয়। বলা হয়, কোম্পানি ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কিনেছে। একটু চাপে আছে। তিন মাস পর তার সব টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগে অফিসে তালা দিয়ে সবাই গা ঢাকা দিয়েছে।
মনোয়ারা বেগম দুঃখ করে আজাদীকে বলেন, খেয়ে না খেয়ে টাকা জমা দিয়েছি। গার্মেন্টসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে আয় করা টাকা। সব নিয়ে চলে গেছে। আমার আর কোনো সঞ্চয় নেই। বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কামরুল ইসলাম নামে আরেকজন গার্মেন্টস শ্রমিক নিজের ৫ লাখ টাকা জমা রাখার কথা উল্লেখ করে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। শুধু মনোয়ারা বা কামরুল নন, গতকাল প্রাইম শ্রমজীবী সমবায় সমিতির অফিসের সামনে দলে দলে লোক নিজেদের সব হারানোর কথা বলে কাঁদছিলেন। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন।
মনসুরাবাদ অফিসেও শ্রমজীবী মানুুষের টাকা জমা রাখা হয়েছিল। অফিসে তালা ঝুলিয়ে গা ঢাকা দেয়া কোম্পানিটি গাজীপুরে আফরিন স্যুয়েটার ফ্যাক্টরি নামে একটি প্রতিষ্ঠান কিনেছেন বলে আন্দোলনকারীরা জানান। তারা তাদের টাকাগুলো উদ্ধারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শত শত শ্রমিকের কয়েক কোটি টাকা জমা রাখা হয়েছে। ডিপিএসের টাকা ফেরত দেয়ার সময় হওয়ায় রাশেদুল ইসলাম রাজু অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন।
গতকাল রাশেদুল ইসলাম রাজুর নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহেদুল কবির বলেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে গত রাত পর্যন্ত কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।