বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বিষয়ে যেন সব দেশ প্রস্তুত থাকে। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক ডিরেক্টর ড. তাকেশি কাসাই বলেছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে কোভিড-১৯-এর ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, যে খবর এই মুহূর্তে আমরা পাচ্ছি, প্রকৃত চিত্র তার থেকেও ব্যাপক। ভৌগোলিকভাবে তা ইতোমধ্যে অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে। এদিকে জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, করোনার নতুন ধরনটির বিরুদ্ধে টিকার নতুন সংস্করণ আনার প্রয়োজন হবে ধরে নিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোর এখনই তোড়জোড় শুরু করা উচিত। খবর বিবিসি বাংলা ও বিডিনিউজের।
ওমিক্রন থেকে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসার আশঙ্কার জন্য সব দেশকে তৈরি থাকতে বলেছেন ড. কাসাই। তিনি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে যেসব শিক্ষা আমরা পেয়েছি নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় তা কাজে লাগাতে হবে।
ওমিক্রন নিয়ে গবেষণা : ডব্লিউএইচও বলেছে, ভ্রমণের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোনো দেশ এই ভ্যারিয়েন্টের ঢোকা শুধু বিলম্বিত করতে পারবে, কিন্তু তা একেবারে ঠেকাতে পারবে না। সংস্থার আপদকালীন আঞ্চলিক ডিরেক্টর ড. বাবাতুন্ডে ওলউকুরে বলেছেন, ওমিক্রনের গতিপ্রকৃতি বুঝতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশাল সংখ্যক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে বর্তমানে একযোগে কাজ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত তারা এমন কোনো তথ্য পায়নি, যার জন্য এই মহামারি মোকাবেলায় এই মুহূর্তে নতুন দিক নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, প্রতিটি দেশ যেন তাদের নিজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান পদক্ষেপগুলো জোরদার করে। যেমন : মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সংক্রমিতদের ট্রেস করা, আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখা এবং টিকাদান অব্যাহত রাখা।
ড. কাসাই স্কুল খোলা রাখার ঝুঁকিগুলো মূল্যায়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবার ওপরও জোর দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ওমিক্রনকে উদ্বেগজনক ধরন ঘোষণা করা হয়। ভাইরাসের এই ধরনটি আগের ধরনগুলোর চেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বর্তমান টিকা এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কতটা কার্যকর হবে সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। ওমিক্রন কতটা উদ্বেগজনক এবং এর বিরুদ্ধে বর্তমান টিকার কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে ব্যাপক পর্যায়ে। বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নানা ধরনের গবেষণার চালাচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে নতুন ধরনে কিছুটা ভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। ওমিক্রনে ব্যথা-বেদনার কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তবে স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি চলে যাবার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এখুনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত মতামত দিতে চাইছেন না। ফলে, নতুন করে কাশি, জ্বর এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়াকেই এখনও কোভিড আক্রান্ত হবার প্রধান তিনটি উপসর্গ হিসাবে তারা গণ্য করছেন।
টিকার নতুন সংস্করণ আনার তাগিদ : ডব্লিউএইচও বলছে, করোনার নতুন ধরনটির বিরুদ্ধে টিকার নতুন সংস্করণ আনার প্রয়োজন হবে ধরে নিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোর এখনই তোড়জোড় শুরু করা উচিত। বিদ্যমান টিকার নতুন সংস্করণ আনার প্রয়োজন হবে ধরে নিয়ে টিকা প্রস্তুতকারকদের আগেভাগেই পরিকল্পনা শুরু করা উচিত। শেষ ঘণ্টা বাজার অপেক্ষায় না থেকে এটা করলেই ভালো হবে। ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর খবর পাননি বলে জানান ডব্লিউএইচও মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমিয়ার।