ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনে দেশ সব দিক থেকেই ডুবেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। টানা বৃষ্টিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেছেন, দেশ আর্থিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে তো এমনি ডুবে গেছে। এখন আপনারা পানিতে ডোবা দেখতে পারছেন। প্রকৃতপক্ষে সব দিক থেকেই বাংলাদেশ ডুবে গেছে এ ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনের কারণে।
গণতন্ত্র মঞ্চের বর্ষপূর্তি ঘিরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ঢাকা শহর তো ডুবে যাবে। মেধাবী লোকজন তো আসতে পারছে না সামনের দিকে। যারা কাজকর্ম করেন এই প্ল্যানিং থেকে শুরু করে এটা বাস্তবায়ন পর্যন্ত, সেখানে তো কিছু মেধাবী লোককে উঠে আসতে হবে। সেটা তো হচ্ছে না। দলীয় লোকজন দিয়ে যদি চালানো হয় তাহলে ঢাকা শহর ডুববে এবং সারা বাংলাদেশও ডুববে। খবর বিডিনিউজের।
সভায় কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গেও কথা বলেন এ বিএনপি নেতা। তার ভাষ্য, কোটার বিষয়ে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, এটি বাংলাদেশের মেধাবীদের ধ্বংস করতে চায়। যেভাবে তারা (আওয়ামী লীগ) সরকার চালাচ্ছে, যেভাবে শাসন ব্যবস্থা চালাচ্ছে, এ রকম চলতে থাকলে আগামী দিনে মেধাবী বাংলাদেশের কোনো সুযোগ নাই, বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। আজকের এই শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশকে একটা মেধাবী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় বলে আমার মনে হচ্ছে না। মেধাবী রাষ্ট্র হয়ত এ রকম একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে খুব একটা সুযোগ নাও হতে পারে। কারণ মেধাবীরা সত্য কথা বলে, মেধাবীরা সত্য পথে চলে, মেধাবীরা প্রতিবাদ করে, মেধাবীরা প্রতিরোধ করে।
আমীর খসরু বলেন, আমি কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতি একটু অনুরোধ করব, তারা যেভাবে কোটার জন্য লড়াই করছে তাদেরকে ভোটের জন্য এভাবে লড়াই করতে হবে, তাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্যে এভাবে লড়াই করতে হবে।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই যে কোটার দাবি সেটাও আমাদের দাবি নামার মধ্যে আসতে পারে, যাতে ছাত্রদেরও আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি এবং বড় আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে পারি। আমাদের সবাইকে মিলে লড়াইটা করতে হবে। সেই লড়াইটা হচ্ছে এই সরকারের পতন। যে রকম করে ছাত্ররা গতকাল ব্যারিকেডে ভেঙেছে, সে রকম করে লড়াইয়ের চিন্তা করি।
গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্যাসিস্ট গণবিরোধী একটা জায়গায় পরিপূর্ণভাবে নিমজ্জিত হয়েছে, সেটা খুব পরিষ্কার। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের কোনো প্রস্তাব নেই। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে এই জমিদারি, এই ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত, এটাই চলতে থাকবে, এটাই চিরস্থায়ী হবে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন করে এই ডাক আমাদেরকে নিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে ছাত্র সমাজ যেভাবে জেগে উঠছে, শিক্ষকরাও পর্যন্ত আন্দোলন করছে। সরকারের নিজের পক্ষের লোকদেরও আর রাখতে পারছে না।
চাকরিতে বিদ্যমান কোটা দ্রুত সংস্কারের দাবি করে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ৫৩/৫৪ বছরে পরে একটা জাতি রাষ্ট্র তাদের নিয়োগ পদ্ধতি কী হবে, মেধার ভিত্তিতে, যোগ্যতার ভিত্তিকে। এটা নিয়ে জাতির মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি হয়েছে। কোটা আন্দোলন ইতিমধ্যেই জনগণের মন স্পর্শ করেছে। ছাত্র–তরুণরা বাস্তবে সমগ্র জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে তারা এখন প্রতিনিধিত্ব করছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এটা মামলা মোকাদ্দমার বিষয় না। এটা রাজনৈতিক বিষয়, এটা একটা প্রশাসনিক বিষয়। সুতরাং আজকে সরকারকে নীতিগতভাবে কোটা সংস্কারের দাবি গ্রহণ করে খুব দ্রুত একটা কমিশন গঠন করে কীভাবে মেধার ভিত্তিতে আমাদের চাকরির নিয়োগ হবে, সে ব্যাপারে একটা কার্যকর বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।