সদারঙ্গের পথ চলা

সংস্কৃতি চর্চায় চট্টগ্রাম

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ মার্চ, ২০২২ at ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

উচ্চাঙ্গ সংগীতের লালন, চর্চা, প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে পণ্ডিত স্বর্ণময় চক্রবর্ত্তী ১৯৯৮ সালে সদারঙ্গ উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিষদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বি-মাসিক শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান এবং বাৎসরিক জাতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মেলন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় উচ্চাঙ্গ সংগীত বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও উচ্চাঙ্গ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন, এক সময়কার সংস্কৃতিবান্ধব গ্রামবাংলা বর্তমানে প্রায় সংস্কৃতি বিবর্জিত অবস্থায় এসে ঠেকেছে। এ থেকে ভাবনা এলো, নতুন প্রজন্মকে বর্তমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিভিন্নমুখী উন্মুক্ত আয়োজন থেকে কিভাবে উদ্ধার করা যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি মাথায় রেখে উদ্যোগ নেওয়া হলো দেশের প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংগীতকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে অন্তত সংগীত মনস্ক নতুন প্রজন্ম পাওয়া সম্ভব হবে। দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে সেটি বাস্তবায়ন হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতিগতভাবে অপরূপ অথচ তাতে সংগীত বিভাগ ছিল না। সে আন্দোলন শুরু করলেন স্বর্ণময় চক্রবর্ত্তী ২০০৩ সাল থেকে। সদারঙ্গের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে এটিও প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। ২০২২ সাল সদারঙ্গের রজতজয়ন্তী বর্ষ। এরমধ্যেই সংগঠনে বহু গুণীজনের সমাবেশ ঘটেছে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম তাঁর মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর সদারঙ্গের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আন্তরিকতার সাথে। সদারঙ্গ একমাত্র সংগঠন যেটির প্রতিষ্ঠা চট্টগ্রামে হওয়া সত্বেও দেশের একমাত্র জাতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মেলন সমগ্র দেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চট্টগ্রামে। নিদারুন অর্থ কষ্টে থেকেও সদারঙ্গর কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ঘটেছে দেশের সমতলের পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলেও।
গত ৩, ৪, ৫ ফেব্রুয়ারি তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় সদারঙ্গের রজতজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে ‘পঞ্চবিংশতিতম জাতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মেলন’। এতে দেশের শতাধিক সংগীত শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। বলা যায়, সদারঙ্গের সুনাম উপমহাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে পৌঁছে গেছে। সদারঙ্গের আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় উচ্চাঙ্গ সংগীত বিষয়ক দেশের একমাত্র প্রকাশনা ‘সুরশৃঙ্গার’এর প্রকাশ। যেটি প্রতি বছর সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এবছর ‘সুরশৃঙ্গার’ প্রকাশিত হয়েছে রজতজয়ন্তী স্মারক গ্রন্থ হিসেবে বড় কলেবরে।
সদারঙ্গের কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে দেশের এবং দেশের বাইরের বহু গুণীজন মন্তব্য করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি, সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক বলেছিলেন, সদারঙ্গ উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিষদ জাতীয় দায়িত্ব পালন করছে। প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, সদারঙ্গের কার্যক্রমগুলো যত দ্রুত গোটা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া যায় ততোই মঙ্গল। নাট্যজন আলী যাকের বলেছেন, আজকের বাংলাদেশে শুদ্ধ সঙ্গীতের প্রতি যে কোন অনুরাগ অথবা শুদ্ধ সঙ্গীতের প্রসারে যেকোন প্রচেষ্টাকেই আমাদের মাথায় তুলে নেওয়া দরকার। ঠিক সেই কাজটিই করছে সদারঙ্গ। তারা জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে উচ্চারিত সংগীতের আবেদনকে পৌঁছে দিচ্ছে শহর থেকে শহরতলীতে। যখন আমাদের ঘরে ঘরে অনুরাগের সৃষ্টি করবে, তখন আমরা সত্যিকারের শিক্ষিত এবং আলোকপ্রাপ্ত একটি জাতিতে পরিণত হব। এই প্রচেষ্টার উদ্ভাবক হিসেবে সাধুবাদ জানাই সদারঙ্গকে। নাট্যজন আসাদুজ্জামান নুর এমপি বলেন, দেশের সংস্কৃতি জগতের দু:সময়ে সদারঙ্গ উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিষদ সুস্থ সংস্কৃতি সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এই সংস্থার দেশব্যাপী কার্যক্রমের আরো সফল ব্যাপ্তি ঘটুক। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, সদারঙ্গের মতো এমন আয়োজন ঢাকাতেও দেখিনা। বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত যশরাজ বলেন, এতদঞ্চলে সদারঙ্গ প্রাণ সঞ্চার করবে। সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান বলেন, সদারঙ্গের কার্যক্রমগুলো থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। উস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া বলেছিলেন, বাংলাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রেক্ষাপটে সদারঙ্গের অবদান অনস্বীকার্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝাউতলা জামিয়া কোরআনিয়া মাদরাসার দস্তারবন্দী সম্মেলন
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মেলেনি স্বীকৃতি