চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ একজন গাড়ির ডেন্টিং মিস্ত্রি। চাকরির কারণে স্ত্রী শারমিন ও তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন কক্সবাজারের চকরিয়ায়। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অসুস্থ মাকে দেখতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। তাদের আর হাটহাজারীর গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়নি। ঘাতক এক ডাম্পার ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া সিএনজি টেক্সিতে দুনিয়ার জীবন শেষ হয় ফিরোজ আহমেদ, শারমিন ও তাদের ৬ মাস বয়সী এক শিশু সন্তানের। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে এই দম্পতির ৬ বছর ও ৩ বছর বয়সী আরও দুই সন্তান। গতকাল সকাল ৭টার দিকে পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নের হাজির বাজার এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় একই পরিবারের তিনজন ছাড়াও মারা গেছেন আরও দুইজন। তারা হলেন সিএনজি চালক মনিরুল মান্নান ও পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়ার বাসিন্দা কোরআনে হাফেজ ও ক্বারী আব্দুর রহমান। নিহতদের মধ্যে ৪ জন ছিলেন চট্টগ্রাম অভিমুখী সিএনজির যাত্রী ও অন্যজন সিএনজি চালক। নিহত সিএনজি চালক মনিরুল মান্নান একই ইউনিয়নের ছৈয়দ আলমের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া থেকে পেকুয়া হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে হাজির বাজার এলাকায় পৌঁছলে বিপরীতমুখী ড্রাম্পার ট্রাকের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে নিহতদের বহনকারী সিএনজি টেক্সিটির। মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে যায় সিএনজিটি। দুর্ঘটনার শিকার সিএনজি যাত্রীদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ৪ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ৬ মাসের শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নেয়ার পথে মারা যায়। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আরেক যাত্রী এবং ফিরোজ ও শারমিন দম্পতির দুই সন্তান।
নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়, টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা নয়াপাড়া এলাকার মৃত সৈয়দ আলমের ছেলে সিএনজি চালক মনিরুল মান্নান (২৩), হাটহাজারী থানার মধ্য মাদার্শা সমিতির হাট এলাকার মুন্সি মিয়ার ছেলে মো. ফিরোজ (৪৯), তার স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৯) ও তাদের ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান জিহাদুল ইসলাম, উজানটিয়া ইউনিয়নের সোনালী বাজার এলাকার মাওলানা বজল আহমদের ছেলে হাফেজ ও ক্বারী আবদুর রহমান (৩৫)। আহতরা হলেন নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও ভটের কান্দি শ্রী পতির চর এলাকার নুরুল ইসলাম ছেলে আল আমিন (৩৭) ও নিহত মো. ফিরোজ ও শারমিনের কন্যা জান্নাতুল মাওয়া (৩) ও ছেলে সাহেদ হোসেন (৬)।
দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা। তিনি বলেন, টইটং ইউনিয়নের হাজির বাজার এলাকায় একটি যাত্রীবাহী সিএনজি ও ডাম্পার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পরিবারের ৩ জনসহ ৫ জন নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ডাম্পারটি জব্দ করা হয়েছে। ঘাতক ডাম্পারের ড্রাইভার ও সহকারী পলাতক রয়েছে। আহত নারায়ণগঞ্জের আল আমিন বলেন, পেকুয়া চৌমুহনী এলাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে হাজির বাজার এলাকায় সিএনজি পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী ড্রাম্পার ট্রাক জোরে ধাক্কা দিলে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।
একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর বিষয়ে জানা যায়, সিএনজির পিছনের সিটে ফিরোজ ও স্ত্রীসহ সন্তানদের নিয়ে বসেছিলেন। স্ত্রীর কোলে ছিল ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান। সামনের সিটে সিএনজি চালকের ডান পাশে বসে ছিলেন নিহত আবদুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় একটি মসজিদের ইমাম, ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। তার দুটি সন্তান রয়েছে।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি মৃতদেহ দেখতে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। এসময় নিহত ও আহত পরিবারের মাঝে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও আহত পরিবারের মাঝে ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক বলেন, টইটং এর হাজির বাজার ধনিয়াকাটা এলাকাটিতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।