আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২১ মার্চ রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত বিআরটিএ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে অংশীজনদের সভায়’ তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
সভায় বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য থ্রি হুইলার এবং মোটরসাইকেলের বেপরোয়া ড্রাইভিংকে দায়ী করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা নিয়ে আমাদের দুর্ভাবনা চলছেই। এই দুর্ঘটনার শেষ নেই। এখানে থ্রি হুইলার, মোটরসাইকেলের বেপরোয়া ড্রাইভিং সবকিছু মিলিয়ে এই এক্সিডেন্ট হচ্ছে। এজন্য নিরাপদ সড়ক প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি শীতল মনোভাব নিয়ে থাকি দুর্ঘটনা হতেই থাকবে। এ ব্যাপারে দোষ না চাপিয়ে যার যার দায়িত্ব পালন করা উচিত।’
সেতু মন্ত্রী বলেন, ‘এই তিন চাকার গাড়ি এবং ঈদযাত্রায় সড়কে সবচেয়ে বড় উপদ্রব মোটরসাইকেল। এখানে একটি নীতিমালা করা দরকার। ২২টি সড়ক মহাসড়কে এসব চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। এখানে হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এটা যদি না হয় তাহলে যত সিদ্ধান্ত নেই না কেন তা বাস্তবায়ন করা কঠিন।’
আসন্ন ঈদুল ফিতরে এবার অনেক বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন। বলা জরুরি যে, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জের বিষয়। নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদযাত্রায় ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কিছু কারণ রয়েছে এবং প্রতি বছরই উৎসব উদযাপনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, আহত হয় অনেকে। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তি–বিড়ম্বনার কারণ।
মতবিনিময় সভায় ঈদের যানজটের সম্ভাব্য ১৫৫টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। তবে সড়কমন্ত্রী কয়েকটি স্থানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘ঈদের সময় দুইটা জায়গায় ঠিক করেন সব ঠিক। ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভারে ফেনী থেকে আসতে যে সময় লাগে সেই ফ্লাইওভার পার হতে এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। এখানে একটা কিন্তু আছে। টোল বাড়ানোর জন্য এখানে কিন্তু সৃষ্টি করা হয় কিনা সেটা দেখতে হবে। আর গাজীপুরের চন্দ্রা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়সহ কয়েকটা জায়গা ঠিক করতে হবে।’ গাড়ির চাপ থাকলে যানজট হবেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একেবারে যানজট মুক্ত হবে এই দাবি করা সমীচীন নয়।’ যাত্রায় গাড়ি চলাচল সচল রাখতে ঈদের আগে ও পরে পাঁচ দিন স্টেশন খোলা রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান সেতুমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা এবং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়ে যায়। এছাড়া ঈদের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটিও দুর্ঘটনার একটি কারণ। তাই চালকদের এ ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অসুস্থ বা ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না।
আসন্ন ঈদে মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার আন্তরিক হলেও সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজনকেও আন্তরিক হতে হবে। মানুষ যেন ভোগান্তিমুক্তভাবে নিজ নিজ বাড়ি যেতে পারে এবং ঈদের পর নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে ফিরতে পারে সে জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা আশা করবো, পরিবহনের সঙ্গে যাঁর যুক্ত আছেন, তাঁদের সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন। যাত্রীদেরও সচেতন থাকতে হবে। লঞ্চ, ট্রেন বা বাসে ঝুঁকি নিয়ে যেন কেউ যাত্রা না করেন। জীবনের মূল্য যে কত বেশি, সেটা অনুধাবন করতে হবে সবাইকে। ঈদের আনন্দযাত্রা যেন বিষাদে রূপ না নেয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।