বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরে সড়কবাতি বন্ধ থাকার প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তদন্ত কমিটি। যখন সড়কবাতি বন্ধ ছিল তখন সড়কের আশেপাশের বাড়িঘর এবং দোকানপাটে লাইট জ্বলছিল। অর্থাৎ পিডিবি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ না করলেও বন্ধ ছিল সড়কবাতি। তবে এ ঘটনায় সংস্থাটির বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলৗ ঝুলন কুমার দাশ–এর সরাসরি সম্পৃক্ততা না পেলেও তার ‘গাফেলতি’ রয়েছে বলে মনে করেন কমিটির সদস্যরা।
‘ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের ৩ থেকে ৫ আগস্ট নগরের কয়েকটি জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে আলোকায়ন বন্ধ রেখে অনিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ’ তদন্তে গঠিত কমিটি গতকাল প্রধান নির্বাহীকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এর আগে ১৪ আগস্ট চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লফিফুল হক কাজমীকে আহ্বায়ক এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে সদস্য সচিব ও আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিনকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বাতি বন্ধ ছিল। তবে সরাসরি কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি দায় এড়াতে পারেন না। ঝুলন কুমার দাশ বর্তমানে কর্পোরেশনে কর্মরত নেই। তাই তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব না। তদন্ত প্রতিবেদনটি সীলাগালা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিব। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবে।
এদিকে তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, তারা পিডিবি’র সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন ওই সময় বিদ্যুতের সমস্যা ছিল না। এমনকি আশেপাশের বাড়িতে বিদ্যুৎ জ্বলে। কিন্তু সড়কে বাতি জ্বলেনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছে। আবার তিনটি পদ্ধতিতে সড়কবাতি বন্ধ করা হয়। সেখানেও কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। কিন্ত পর পর বাতি বন্ধ থাকারও বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবাহত করেননি ঝুলন দাশ। আবার কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি। তাই বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব এড়াতে পারেন না তিনি।
কমিটির সদস্য ও চসিকের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাইনি। তবে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার প্রমাণ পেয়েছি। যেহেতু পরপর এরকম ঘটনা ঘটলেও অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় হয়নি বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করেনি তাই যিনি দায়িত্বে ছিলেন তার গাফেলতি এড়ানোর সুযোগ নেই। তাই গাফেলতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা গত ১৩ আগস্ট বিকেলে টাইগারপাস চসিকের প্রধান কার্যালয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত হয়ে ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। তাদের দাবি ছিল, ঝুলন কুমার দাশের নির্দেশে সরকার পতনের আন্দোলন চলাকালে গত ৩ থেকে ৫ আগস্ট শহরের সব সড়ক বাতি বন্ধ রাখা হয়। সড়ক বাতি বন্ধ করে রাতের আঁধারে ছাত্র–জনতার ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার–নির্যাতন চালানো হয়। গুলিবর্ষণও করা হয়। এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাই ঝুলন কুমার দাশকে বরখাস্ত করার দাবি জানায় তারা। পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করে চসিক। তবে বরখাস্তের মধ্যেই গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঝুলন কুমার দাশকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে বদলি করে মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে তিনি সেখানে যোগও দিয়েছেন।