হালিশহর এলাকায় কয়েক লাখ মানুষের দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্ভোগের অবসানের উদ্যোগ নিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের সময় নিচের সড়ক সংস্কার করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স তা করেনি। সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি ছিল বেহাল। ইপিজেড এলাকায় র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু করার পর পরিস্থিতি এতই খারাপ হয় যে, রাস্তাটি যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এলাকাবাসী নানাভাবে সিডিএ ও ম্যাক্সকে বলে সড়কটি সংস্কার বা যান চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি। অবশেষে এলাকাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সরেজমিনে সড়কটি পরিদর্শন করেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কার করার নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সাথে চুক্তি ছিল, তারা এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করলেও নিচের সড়কের প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে যান চলাচলের উপযোগী রাখবে। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। গত ক’বছর ধরে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলাকালে নিচের রাস্তা নিয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে। লালখান বাজার থেকে কাঠগড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ষোল কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সময় কিছু কিছু এলাকার বেহাল রাস্তা ঠিক করলেও বন্দর–পতেঙ্গা অঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তাটি সংস্কার হয়নি। গত প্রায় এক বছর ধরে ইপিজেড এলাকা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা বেহাল হয়ে যায়। বড় বড় খানাখন্দে ভরে ওঠে। রাস্তাটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করছিল ঝুঁকি নিয়ে। অনেক মানুষ আগ্রাবাদ থেকে লালখান বাজারে ফ্লাইওভারে ওঠে, পতেঙ্গায় টোল দিয়ে উল্টো পথে ইপিজেড এলাকায় আসেন। তবুও আগ্রাবাদ থেকে নিচের সড়ক দিয়ে সল্টগোলা ক্রসিংয়ের পর আর যেতে চান না।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য সিডিএ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সাম্প্রতিক বর্ষণে রাস্তাটির অবস্থা আরো বেহাল হয়। তাই এলাকাবাসী সিটি মেয়রের শরণাপন্ন হন। তারা তাদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে মেয়রের নিকট অনুরোধ করেন।
মেয়র তাদের বলেন, কোনো একটি স্থানে সরকারি একটি সংস্থার উন্নয়ন কাজ চলার সময় সেখানে অপর সংস্থা কাজ করতে পারে না। কিন্তু এলাকাবাসী নিজেদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য জানান। মেয়রকে রাস্তাটি সরেজমিনে দেখার আহ্বান জানান।
সিটি মেয়র গতকাল দুপুরে কর্পোরেশনের প্রকৌশল টিম নিয়ে ওই এলাকায় যান। তিনি স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের সাথে কথা বলেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে সড়কটি পরিদর্শন করেন।
এ সময় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জমিসউদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম মেয়রের সাথে ছিলেন। এলাকাবাসীর পক্ষে এস এ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দীন আলম, বিসিবি পরিচালক লায়ন এম মনজুর আলম, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের চৌধুরী রাসেল, আবদুল আজীজ, মোহাম্মদ হানিফ সওদাগর, রুকুনউদ্দিন মাহমুদ খলিলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসী অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ এবং গর্ভবতী মায়েদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন। এলাকাবাসীর দুর্ভোগের বর্ণনা শুনে সিটি মেয়র আগের সিদ্ধান্ত পাল্টান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ কাজ চললেও সিটি কর্পোরেশন রাস্তা সংস্কার করবে। র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলে প্রয়োজনে আবারও রাস্তাটিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়র কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাস্তা সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দেন। মেয়রের নির্দেশে গতকাল থেকেই রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।