সড়ক-মহাসড়কের আতঙ্ক এখন মোটরসাইকেল

অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ৩৭.৫২ শতাংশই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়

ঋত্বিক নয়ন | সোমবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

সড়কমহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে চলা মোটর সাইকেলগুলো এখন ভয়াবহ আতঙ্ক। দেশে অনিরাপদ সড়ক আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে পাল্লা দিয়ে মাঠে নামা এই দুই চাকার যানটি। গবেষণায় উঠে এসেছে, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তা বিশ্বে সর্বোচ্চ। দেশে দু’চাকার এ যানটির উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় দাম যেমন কমেছে, সহজে মিলছে নিবন্ধন, তেমনি পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুও যেন সহজ হয়ে উঠেছে। লোনে, কিস্তিতে বা সামান্য টাকা হলেই মোটরসাইকেল কিনতে পারছে যে কেউ। কিন্তু তাতে যে মৃত্যুঝুঁকি কত বাড়ছেসেটা যেন কেউ চিন্তা করছে না। সর্বশেষ গত শনিবার একদিনেই নগরী ও জেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাত জন এবং আহত তিনজন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিকপশ্চিম) তারেক আহমেদ আজাদীকে বলেন, নগরীতে রাস্তার ট্রাফিক ঘনত্বের অবস্থা বুঝে যানবাহনগুলো ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে চালাতে পারে। কিন্তু গতির ক্ষেত্রে অনেক সময় নিয়ম মানতে দেখা যায় না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর বর্তমান জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা কম। অন্যদিকে যানবাহনের সংখ্যা সড়কের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এখানে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ধীরগতির রিকশাসহ অন্যান্য দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য নেই সুনির্দিষ্ট লেইন। ফলে বেপরোয়া গতির মোটর সাইকেলসহ যে কোনো যানবাহনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, গেল অক্টোবর মাসে সারাদেশে ৫৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৭৯ জন। এর মধ্যে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন ২২১ জন। শতকরা হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ৩৭ দশমিক ৫২ ভাগই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের অর্ধেকের বয়সই (৫১.৪২%) ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। কিশোরযুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনার কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে এবং অন্যদেরও বিপদে ফেলছে বলে পর্যবেক্ষণ দিচ্ছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরসাইকেল উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে সরকার নানা প্রকার সুযোগসুবিধা দিচ্ছে। ফলে মোটরসাইকেলের ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। এতে আরও বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল বাম লেনে চালাতে হবে; ফুটপাতে চালানো যাবে না; বৃষ্টির সময় অতি সহজে থামানো যায় এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীর গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে হবে; মোটরসাইকেল চালানোর সময় হঠাৎ গতি বৃদ্ধি করা, থামানো বা দ্রুত মোড় নেওয়া যাবে না; কুয়াশায় লোবিম বা ডিপার জ্বালিয়ে সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীর গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে হবে। দৃষ্টিসীমা বেশি মাত্রায় কমে গেলে বা একেবারেই দেখা না গেলে মোটর সাইকেল চালানো বন্ধ করতে হবে; মোটরসাইকেল চালানোর সময় নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলতে হবে; রাতে মোটর সাইকেল চালালে রেট্রোরিফ্লেক্টিভ জ্যাকেট ব্যবহার করতে হবে; মোটরসাইকেল চালানোর সময় ফার্স্ট এইড কিট বহন করতে হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৮,৬৪,৫৩৬টি, এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যাই ৪২,৪০,৮৫৫ টি। ২০১৯ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২৭,৮৬,৯৫৪টি। এর বাইরে একটি বড় অংশের মোটরসাইকেল অনিবন্ধিত। বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ৫ লাখ নতুন মোটরসাইকেল বিক্রি হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০০৬ সালের একটি গবেষণা বলছে, ভাল মানের একটি হেলমেট পরলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হওয়ার ঝুঁকি কমে ৭০ শতাংশ। আর মৃত্যুঝুঁকি কমে ৪০ শতাংশ। বড় শহরের বাইরে হেলমেট না পরার প্রবণতার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের টিআই আনোয়ার হোসেন আজাদীকে বলেন, হেলমেট না পরার কারণে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেল বিপণনকারী একটি বহুজাতিক কোম্পানির পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বড় কারণগুলোর একটি হলো ওভারটেকিং। এছাড়া ক্লান্তি নিয়ে চালানো এবং তাড়াহুড়া করাও অন্যতম কারণ। বাস, ট্রাক, লেগুনা ও প্রাইভেট কারের বেপরোয়া চালনা ও হঠাৎ লেন পরিবর্তন, অযান্ত্রিক যানবাহনের হুটহাট মোড় ঘোরানো ও লেন পরিবর্তন, রাস্তায় হঠাৎ গর্ত, ম্যানহোলের উঁচু অথবা নিচু ঢাকনা ও গতিরোধকে চিহ্ন না থাকা, পথচারীদের অসতর্কতা এবং হঠাৎ করে কুকুর, গরুছাগল রাস্তায় চলে আসাও দুর্ঘটনার বড় কারণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিখোঁজের ২৩ ঘণ্টা পর শঙ্খেই ভেসে উঠলো মনির লাশ
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে বাইক দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু