সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল থামাতে হবে

| সোমবার , ১৯ মে, ২০২৫ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

সড়কে মৃত্যুর মিছিল দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই, সংবাদমাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এ রকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাঙ্ক্ষিত। গত ১৭ মে দৈনিক আজাদীতে ‘সড়কে মৃত্যু থামছেই না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক পথচারী প্রাণ হারান। একইদিন রাঙামাটিতে ট্রাক্টর দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়। এর আগে ১১ মে সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন মারা যান। একইদিন হাটহাজারী ও সাতকানিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জন মারাত্মক আহত হয়। বাইকসহ আরোহী পুড়ে যায় এতে। এর আগে ৩ মে পটিয়ায় বাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয় একজন। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে গত দেড় মাসে অন্তত ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্রামীণ সড়কগুলোতেও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বেশিরভাগ দুর্ঘটনা হচ্ছে মোটরসাইকেল সংঘর্ষে। মোটরসাইকেল আরোহীদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ি ড্রাইভিং করার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের গত দেড় মাসের তথ্য যাচাই ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনের তথ্যে এসব জানা গেছে। সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, সড়কের বেহাল দশা প্রধান কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য সবচেয়ে বেশি সচেতনতা দরকার এবং এর জন্য নানা উদ্যোগ জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১৪০টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে ৩০ জনের বেশি। আহত হয়েছে ১৮০ জনের বেশি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪০টি। প্রায় প্রতিদিন সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেই চলেছে এরকম সড়ক দুর্ঘটনা। জননিরাপত্তার স্বার্থে এ নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। দেখা যাচ্ছে, আইন না মানার কারণে কিছু জরিমানা করা হলেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। তার মানে যে মাত্রায় নজরদারি ও জরিমানা করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। এমনকি উল্টো পথে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল ও প্রবেশ করছে। মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। তাও আবার চলছে উল্টো পথে। শুধু তাই নয়, ভ্যানগাড়িও চলছে এ সড়কে। এতটা বিশৃঙ্খলা নিয়ে মহাসড়ক আদৌ নিরাপদ রাখা সম্ভব?

এ সমস্যা সমাধানের জন্য সড়কমহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচারশাস্তি প্রদানের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ আইনের প্রত্যাশা অনেক পুরনো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনভিজ্ঞতা, বেপরোয়া গতি, আইন ভঙ্গের অভ্যাস ও সামনের গাড়িকে অতিক্রম করার প্রয়াস; আমাদের দেশের অধিকাংশ গাড়ি চালকের মধ্যে আছে। আর এসব কারণেই সহজে ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ হলো আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখবার জন্য দেশে আইন আছে ঠিকই, আইনের প্রয়োগ নেই। এর জন্য পুলিশের অনীহা বেশি দায়ী। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ব্যতীত সড়কের আইন অমান্য করার শাস্তিগুলো পুলিশ অর্থ বিনিময়ের মাধ্যমেই সমাধান করে। রাজধানীর বাইরে পুলিশ কর্তৃক আটকানো মানে গাড়ি চালকের পকেট খালি হওয়া। সাধারণ সমস্যা না হলেও, পুলিশ হয়রানির উদ্দেশ্যে যেকোনো একটি সমস্যা খুঁজে বের করে। যারা প্রতিনিয়ত সড়কে যানবাহন নিয়ে চলাচল করেন, তাদের কাছে বিষয়টি সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। পুলিশের ঠিক এই জায়গাটিতে স্বচ্ছতা না এলে, সড়কে আইন অমান্যের প্রবণতা কমবে না। আইন মানলে যে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে, তা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো অধিক জনবহুল দেশে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো বেশ জটিল। এতে পুলিশের লোকবল বৃদ্ধির বিষয়টিও জড়িত। তবে যেহারে আশঙ্কাজনকভাবে প্রতিদিন দেশে দুর্ঘটনা ঘটছে, তা সত্যিই উদ্বেগের কারণ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের প্রশিক্ষণ ও পুলিশের আইন বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধিউভয়ই প্রয়োজন। সড়কের এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে, সরকারকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে