সকালে মা হয়ে খুশিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, রাতেই মৃত্যু

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শুক্রবার , ১৪ জুন, ২০২৪ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সকালে পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে ফেসবুকে সকলের দোয়া চেয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন নাজমিন আক্তার নামে রাঙ্গুনিয়ার এক গৃহবধূ। পাশাপাশি তার দুবাই প্রবাসী স্বামীও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। পরিবারের সবার মাঝে বিরাজ করছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু তাদের সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সকালে সন্তানের জন্য দোয়া চাওয়া মা নাজমিন আক্তার রাতেই মৃত্যুবরণ করেন। গত মঙ্গলবার এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনাকদমতলি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ফেরিঘাট এলাকার দুবাই প্রবাসী মো. রিমনের স্ত্রী। গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসা মাঠে তার নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। প্রসবজনিত জটিলতা থেকেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা স্বজনদের। তবে এমন মৃত্যু মানতে পারছেন কেউই।

নাজমিন আক্তারের ভাই আরিফ হোসেন ইউনুস বলেন, বছর দেড়েক আগে তার বোনের বিয়ে হয়। গত সোমবার রাতে সন্তান সম্ভাবা নাজমিনের প্রসব ব্যথা উঠলে স্বজনরা তাকে প্রথমে চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে নোয়াপাড়া পাইওনিয়ার হাসপাতালে নেয়। সেখানে অপারেশন থিয়েটারেও নেওয়া হয়। পরে তারা জবাব দিলে নেয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সিজারিয়ার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমিন পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। এরপর তিনি সুস্থ ছিলেন, সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেন। নিজের সন্তান হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে পোস্ট দেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, পুত্র সন্তানের মা হলাম।’

অন্যদিকে দুবাই প্রবাসী তার স্বামী রিমনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সন্তানের বাবা হওয়ার খবর সবাইকে জানিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘আল্লাহ তায়লার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া, আমাকে রাজপুত্র দান করেছেন। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছেন, আলহামদুলিল্লাহ। সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।’ এভাবে পরিবারের সবার মাঝে যখন উচ্ছ্বাস বিরাজ করছিল, তখন দুপুরের দিকে তাকে রক্ত দেয়া হয়। রক্ত চলতে চলতেই তার খিঁচুনি ওঠে। আস্তে আস্তে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। রাতেই তার মৃত্যু হয়।

চন্দ্রঘোনাকদমতলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আজগর বলেন, উপজেলার চন্দ্রঘোনাকদমতলি ইউনিয়নে বনগ্রাম সাবস্টেশন এলাকায় নাজমিনদের বাড়ি। একই ইউনিয়নের ফেরিঘাট এলাকার মো. রিমনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিন মাস আগে চাকরি নিয়ে দুবাই চলে যান রিমন। এভাবে সন্তানের জন্মদিয়ে স্ত্রীকে হারিয়ে পাগল প্রায় স্বামী রিমন দাফন করতে দেশে এসেছিলেন। নিজের স্ত্রীর রেখে যাওয়া শেষ চিহ্ন শিশুপুত্রকেও দেখেছেন। তবে সেই দেখা ছিল বিষাদময়। এদিকে সন্তান জন্মদিয়ে গৃহবধূর এমন মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে শোক বিরাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরশি ছিঁড়ে পালানো মহিষের আক্রমণে প্রাণ গেল পথচারীর
পরবর্তী নিবন্ধদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে বড় চ্যালেঞ্জ অটোমেশন