বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন বুননের কারিগর। তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর বাঙালি যেন সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে বিশ্বের মানচিত্রে। তিনি তাঁর লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিলে তিলে প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি অস্থিমজ্জায় লালন করেছিলেন বাঙালির স্বাধিকার মুক্তি ও বাস্তবিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন সংগ্রামী চেতনা। বাঙালির সুখ–দুঃখ, আনন্দ–বেদনা ও স্বপ্ন–আকাঙ্ক্ষাকে নিজের ভেতরে ধারণ করে তিনি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন স্বাধীনতা। বিশ্বের বুকে এঁকে দিয়েছেন নতুন মানচিত্র। তিনি শুধু একটি স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি। জাতি গঠনেও রেখে গেছেন অনন্য অবদান। নানা ঘটনার ঘাত–প্রতিঘাতে বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবনের অধিকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
আমরা স্মরণ করতে পারি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক মহাকাব্যিক ভাষণটি দিয়েছিলেন, তার কথা। বলেছিলেন : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’। তাঁর ভাষণের মূল কথাটি ছিল মুক্তি। এ মুক্তি শব্দটির ব্যঞ্জনা ও ব্যাপকতা ছিল বহুমাত্রিক। এই শব্দে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, তিনি যে রাষ্ট্রচিন্তা করতেন তার মূলে ছিল সাধারণ মানুষ ও তাদের কল্যাণ। তাঁর মতো করে তিনি তাই বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার কথা বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিতে যুক্ত করেছিলেন। গণমানুষের সেই অর্থনৈতিক মুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা অবিস্মরণীয়।
বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা যাঁর অঙ্গুলি নির্দেশে তৎসময়ে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। তাঁর নেতৃত্বে অর্জন করা এই স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তাকে কেউ অস্বীকার করে না। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি গণভবন–বঙ্গভবন রেখে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। ক্ষমতার ললাট কখনই বঙ্গবন্ধুকে স্পর্শ করতে পারেনি। সকল স্তরের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় মুজিব ভাই। এ রকম বহুমুখী গুণের অধিকারী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রাজনীতি–বিশ্লেষকরা বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে, বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবনকাল হচ্ছে গবেষণার বিষয়বস্তু, রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট। একটা মানুষ কিভাবে সাধারণের কাছে এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে–সেটাই গবেষণায় উঠে আসতে পারে। তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ শুধু নয়, সবার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হতে পারে। তিনি রাজনীতিটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, কবির তুলির ন্যায় রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণের ছাপ রাখতে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। সংসার, ছেলেমেয়ে, পরিবার–পরিজন ছেড়ে দিয়ে তিনি বাঙালির মুক্তির জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করে গিয়েছেন।’
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী।