দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা না করে বিদ্যমান কাঠামোকে সংস্কার করে শক্তিশালী করার পরামর্শ এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কাছে থেকে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব আপাত বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিপিডি আয়োজিত এক জাতীয় সংলাপে সংস্থাটির কাছে থেকে এ পরামর্শ এসেছে। বিদ্যমান এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থাকেই আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। খবর বিডিনিউজের।
ছাত্র–গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলোসহ ৮৪টি বিষয় সংকলিত করে জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের বিষয়টিও রয়েছে। জুলাই সনদ আগামী ১৫ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে। তার আগে সিপিডির কাছ থেকে এমন সুপারিশ এল।
‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবে?’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম আহমেদ। সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বেশ কিছু সংস্কার ধারণা যেমন, ‘বাইক্যামেরালিজম’, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বা নিয়োগ কমিটি গঠন নীতিগতভাবে আকর্ষণীয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসব কার্যকর নয়। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এসব প্রস্তাব কার্যত প্রতীকী হয়ে থাকবে। এতে জবাবদিহি বা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বদলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা, প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই উচ্চকক্ষ গঠন না করে বিদ্যমান সংসদকেই কার্যকর করার ওপর জোর দিতে হবে। এ জন্য বেসরকারি দলের সদস্যরা যাতে বিল আনতে পারে, কমিটিগুলো যাতে গুণগতভাবে কাজ করতে পারে, একযোগে যেন ‘হ্যা’ জয়যুক্ত হয়েছে সংস্কৃতি বন্ধ হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এমপিরা যেন দলীয়প্রধানের গুণকীর্তন আট মিনিট ধরে করতে না পারেন, প্রধানমন্ত্রীকে যেন সবাই স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারে সেটার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক নিজাম আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো উচ্চকক্ষে দলীয় লোককে প্রতিনিধি করতে পারে। আবার উচ্চকক্ষের তেমন ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, নিম্নকক্ষ না চাইলে উচ্চকক্ষ কিছুই করতে পারবে না। আবার নিম্নকক্ষ চাইলে উচ্চ কক্ষের আপত্তি থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন করা যাবে। তাহলে উচ্চকক্ষ রাখার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজন সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, সবকিছুতেই ঐক্যমত্য হওয়া সম্ভব না। বিভিন্ন মতের মধ্যে ঐক্য খুঁজে নিতে হবে। শেখ হাসিনাও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু স্বৈরাচারী ব্যবস্থার সুযোগ থাকায় তিনি দানবে পরিণত হয়েছিলেন। ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের’ মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা গেলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিস্ট হতে পারবে না। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা না হলে উচ্চকক্ষ করেও লাভ হবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, একটি দলের কর্মসূচি ও আদর্শকে মাথায় রেখে বর্তমান সংবিধান করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধান তো একটি দলের জন্য না। বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে এই সংবিধান দেশকে এক–এগারোর মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সবার মতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হলেও আওয়ামী লীগের একক সিদ্ধান্তে সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো দলই ৫০ শতাংশ ভোট পাবে না। দেশে সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা করা যাবে। পিআর চালু করলে চিরতরে স্বৈরাচার হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।