সংক্রমণের ২৮ দিন পরও শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব!

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চান্দগাঁও এলাকার এক গৃহবধূর শরীরে করোনা শনাক্ত হয় অক্টোবরের শুরুতে। শনাক্তের ১০/১২ দিন পর পুনরায় নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০ দিন পর ৩য় দফায় নমুনা পরীক্ষা করান তিনি। তাতেও ফল আসে পজিটিভ। একইভাবে হাটহাজারী এলাকার বেসরকারি এক চাকরিজীবীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। ১৩/১৪ দিন পর ২য় দফা নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। ২৮ দিন পর আবারো নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। ৩য় দফায় পরীক্ষায়ও ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে ওই ব্যক্তির শরীরে। কেবল এ দুজন নয়, আক্রান্ত অনেকের ক্ষেত্রেই এমন তথ্য মিলেছে। এ ধরনের রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরাও। চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমিত হওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিন পর মানুষের শরীরে ভাইরাসটি আর জীবিত থাকে না। যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ১৪ দিন পরবর্তী নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসতে দেখা যায়। প্রথম দিকে কিন্তু এ রকমই স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। তবে সমপ্রতি ব্যতিক্রমী কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাদের শরীরে সংক্রমণের ২০/২৫ দিন পরও ভাইরাসটির অস্তিত্ব ধরা পড়ছে।
এমন রোগী পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, হাটহাজারীর বাসিন্দা এমন এক রোগী আমার কাছে এসেছিলেন। হিস্টোরি নিয়ে জেনেছি, করোনার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে এক মাসের মধ্যে তিনবার নমুনা পরীক্ষা করেন তিনি। তিনবারই তার করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। শেষ দফায় প্রায় এক মাসের মাথায় পরীক্ষা করান। তাতেও রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। এতদিনেও শরীরে ভাইরাসটির অস্তিত্ব ধরা পড়ার বিষয়ে বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও করোনা ম্যানেজমেন্ট টিমের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, মানব শরীরে করোনার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ভাইরাসটি মারা যায়। তবে ভাইরাসটি মারা গেলেও ৪২ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত শরীরে ভাইরাসের আরএনএ থেকে যায়। যার কারণে ১৪ দিন পরও আরটিপিসিআর টেস্ট করালে রেজাল্ট পজিটিভ আসতে পারে। তবে রেজাল্ট পজিটিভ এলেও তিনি ইনফেকটেড বা ভাইরাসের বহনকারী বলা যাবে না। কারণ, ১৪ দিন পর ওই রোগীর শরীরে ভাইরাসটি আর জীবিত থাকে না। অবশ্য, ভাইরাসটি মারা গেলেও মানব শরীরে তার ক্ষতিকর প্রভাব বেশ কিছুদিন থেকে যেতে পারে। ফলে আক্রান্তের পর করোনা নেগেটিভ হলেও অনেক রোগীকে দুর্বলতাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে দেখা যায়।
অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন চমেক হাসপাতালের করোনা ম্যানেজমেন্ট টিমের কোর-কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তার। তিনি বলেন, মানুষের শরীরের ইম্যুনিটিও (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) একটা ফ্যাক্টর। এই ইম্যুনিটির ভিন্নতার কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। ভাইরাসের চরিত্র বদলানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটছে কিনা তা বলার সময় এখনো আসেনি উল্লেখ করে মেডিসিনের এই চিকিৎসক বলেন, আরো বেশ কিছু কেস পাওয়া গেলে, সেগুলো পর্যালোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে, সংক্রমণ পরবর্তী একবার সুস্থ হওয়ার পর ২য় এবং ৩য় দফায়ও করোনায় আক্রান্তের তথ্য আসছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আরো সতর্কতার পাশাপাশি অবশ্যই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিমনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
পরবর্তী নিবন্ধমাদারবাড়িতে চসিকের ৭ একর জায়গা উদ্ধার