সাতকানিয়ায় নিজ বসতঘরের শয়ন কক্ষ থেকে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হক মিঞার (৮৫) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু, সাতকানিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল বশিরুল ইসলাম ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত আবদুল হক মিঞার বাড়ির কর্মচারী জমির উদ্দিনকে আটক করেছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া চেয়ারম্যান পাড়ার উকিল বাড়ির মৃত কাছিম আলী উকিলের ছেলে আবদুল হক মিঞা রোববার রাতে খাবার খেয়ে নিজের শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। গতকাল সকাল নয়টার পরও তিনি ঘুম থেকে না উঠায় বাড়ির গৃহপরিচারিকা তাকে ডাকতে শয়ন কক্ষে যান। এসময় গৃহপরিচারিকা বিছানার উপর চেয়ারম্যানের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
নিহত চেয়ারম্যানের বাড়ির গৃহপরিচারিকা বুলু আকতার জানান, আমি সকাল এসে অন্যান্য দিনের মতো ঘরের পেছনের দরজা খোলা অবস্থায় পাই। শুরুতে ঘরের হাড়ি-পাতিল ধুয়ে আনার পর নাস্তা তৈরি ও ভাত রান্না করি। অন্যান্য দিন আমি আসার আগেই চেয়ারম্যান ঘুম থেকে উঠে যেতেন। গতকাল সকাল নয়টার পরও তিনি ঘুম থেকে না উঠায় আমি তার শয়ন কক্ষে যাই। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ওই কক্ষের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এসময় টর্চলাইট নিয়ে ডাকতে গিয়ে দেখি তিনি বিছানার উপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। এসময় তার মুখ ও বুকের উপর বালিশ ছিল। আর খাটের পাশে কাপড় দিয়ে চোখ-মুখ এবং পা বাঁধা অবস্থায় বাড়ির কর্মচারী জমিরকে দেখতে পাই। পরে বিষয়টি আমি সবাইকে জানাই।
বাড়ির কর্মচারী জমির উদ্দিন জানান, রোববার রাতে ভাত খেয়ে চেয়ারম্যান নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। আমি পাশের কক্ষে ঘুমাই। গভীর রাতে মুখোশধারী ৪-৫ জন এসে আমাকে ধরে চেয়ারম্যানের কক্ষে নিয়ে মারধর শুরু করেন। তখন চেয়ারম্যান আমাকে মারধর করতে নিষেধ করেন। তখন তারা আমার চোখ-মুখ এবং পা বেঁধে চেয়ারম্যানকে মারধর করেন। চোখ বাঁধা থাকায় চেয়ারম্যানকে কী দিয়ে এবং কিভাবে হত্যা করেছে আমি বুঝতে পারিনি। দরজা-জানালা না ভেঙে বাইরের লোক কিভাবে ঘরে প্রবেশ করল জানতে চাইলে জমির কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
হাত খোলা থাকার পরও চোখ-মুখ এবং পায়ে থাকা কাপেড়ের বাঁধন খুলল না কেন জানতে চাইলে জমির জানান, আমি ভয়ের মধ্যে ছিলাম। নিহত আবদুল হক মিঞার ছেলে মো. মাঈনউদ্দিন মনু জানান, ঘরে আমার বাবা এবং কর্মচারী জমির ছিলেন। সকালে এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম কে বা কারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি চাই প্রশাসন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আমার বাবার হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুক।