শ্রীলংকান তারুণ্যের জয়

ফাইনালে পাকিস্তানের ২৩ রানের হার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:১৫ পূর্বাহ্ণ

টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ১০৫ রানে অল আউট হয়ে আফগানিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছিল শ্রীলংকা। কিন্তু কে জানতো সেটাই তাদের একমাত্র এবং শেষ হার। এরপর একে একে সব প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিল শ্রীলংকা। এর মধ্যে পাকিস্তানকে হারাল টানা দ্বিতীয়বার।
এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক শ্রীলংকা। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নিজ দেশে আয়োজন করতে পারেনি টুর্নামেন্টটি। আয়োজন করতে হয় আরব আমিরাতে। নিজ দেশে আয়োজন করতে না পারার অপ্রাপ্তিটাকে ঘুচিয়ে দিয়েছে একেবারে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে এশিয়া কাপের আরো একটি শিরোপা জিতে নিল শ্রীলংকা। গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত
টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্রীলংকা ২৩ রানে পাকিস্তানকে পরাজিত করে এশিয়া কাপের ষষ্ট শিরোপা জিতে নেয়। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই হিসেবের মধ্যে না রাখা শ্রীলংকা যেন সবাইকে দেখিয়ে দিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা কীভাবে খেলতে হয়। একটি তরুণ দল কীভাবে শিরোপা জিততে পারে তা যেন বুঝিয়ে দিল শ্রীলংকা। সকল পরাশক্তিতে পেছনে ফেলে এশিয়ার সেরা এখন তারা।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকাকে প্রথম ওভারেই ধাক্কা দেন নাসিম শাহ। ইনিংসের তৃতীয় বলে কুশল মেন্ডিসের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন এই পেসার। আগের ম্যাচে একবল খেলে রানের খাতা খুলতে না পারা মেন্ডিস এ ম্যাচেও একবল খেলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নিজের প্রথম ওভার বল করতে এসে হারিস রউফ ফেরালেন নিশাংকাকে। আগের ম্যাচে অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে জেতানো নিশাংকা ফিরেছেন ১১ বলে ৮ রান করে। পাকিস্তানি পেসাররা শুরুটা দুর্দান্ত করে। আর সে ধারাবাহিকতায় নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবার হারিস রউফের আঘাত। এবার তার শিকার দানুশকা গুনাতিলকা। আগের ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই তাকে ফিরিয়েছিলেন রউফ। তবে এবার ১ রান করেছেন ৪ নাম্বারে নামা এই ব্যাটার। তার স্টাম্পও উপড়ে ফেলেন হারিস রউফ। টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও মিডল অর্ডারে দলকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। বাবর আজম তার নিয়মিত স্পিনারদের না এনে ইফতেখারকে আনেন আক্রমণে। নিজের প্রথম ওভারেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন ইফতেখার। দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে ফেরালেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে। ২১ বলে ২৮ রান করেন এই মিডল অর্ডার। পাকিস্তানি বোলারদের প্রত্যেকেইে নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পেলেও শাদাব খান পেয়েছেন দ্বিতীয় ওভারে। তাকে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হন ৩ বলে ২ রান করা সানাকা। ৫৮ রানে ৫ উইকেট নেই লংকানদের। ষষ্ট উইকেটে রাজাপাকশে এবং হাসারাঙ্গা মিলে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। ৩৬ বলে ৫৮ রানের জুটিও গড়েছিলেন দুজন। কিন্তু তাদের আর বেশিদূর এগুতে দেননি হারিস রউফ। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে প্রথম ওভারেই উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের ক্যাচে পরিণত করে হাসারাঙ্গাকে ফেরান রউফ। ২১ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আসেন হাসারাঙ্গা। একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করতে থাকা রাজাপাকশে তুলে নেন টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। ২৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। একপ্রান্ত আগলে রেখে রাজাপাকশে দলকে নিয়ে যান ১৭০ রানে। রাজাপাকশে অপরাজিত থাকেন ৪৫ বলে ৭১ রান করে। যেখানে তিনি ৬টি চার এবং তিনটি ছক্কা মেরেছেন। করুনারত্নে অপরাজিত ছিলেন ১৪ বলে ১৪ রান করে। পাওয়ার প্লেতে ৪২ রান করা শ্রীলংকা ১০ ওভারে করে ৫ উইকেটে ৬৭ রান। পরের দশ ওভারে তুলে ১০৩ রান। পাকিস্তানের পক্ষে ৩ উইকেট নেন হারিস রউফ।
১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয় পাকিস্তানের। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যর্থ বাবর আজম ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ করে ফিরলেন মাত্র ৫ রান করে। টুর্নামেন্টের ছয় ম্যাচে বাবরের রান ৬৭। যেখানে সর্বোচ্চ ৩০। লিয়ানাগামাগেকে পুল করতে গিয়ে শর্ট পাইনলেগে ধরা পড়েন বার। পরের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন আরেক ব্যর্থ ফখর জামান। হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে লিয়ানামাগে। কিন্তু ইফতেখার এসে তা হতে দেননি। তৃতীয় উইকেটে রিজওয়ান এবং ইফতেখার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। ৭১ রানের জুটিও গড়েছিলেন দুজন। কিন্তু এরপর আর দলতে টানতে পারলেন না তারা। ৩১ বলে ৩২ রান করা ইফতেখারকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন লিয়ানাগামাগে। মোহাম্মদ নওয়াজ এসেও সুবিধা করতে পারেনি। ফিরেছেন ৬ রান করে। তবে একপ্রান্ত আগলে রাখা রিজওয়ান তুলে নেন টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় এবং ক্যারিয়ারের ১৭ তম হাফ সেঞ্চুরি। নিজের অর্ধশতক পূরণের পর রনে ভঙ্গ দেন রিজওয়ান। ফিরেছেন ৪৯ বলে ৫৫ রান করে। পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা তখণই শেষ হয়ে যায়। একই ওভারে আসিফ এবং খুশদিল শাহকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন হাসারাঙ্গা। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান থামে ১৪৭ রানে। আর শ্রীলংকা ফাইনাল জিতে নেয় ২৩ রানে। সে সাথে শিরোপাও। মাদুশান নিয়েছেন ৪ উইকেট। আর হাশারাঙ্গা নিয়েছেন ৩ উইকেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাই-বোনের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, ডুবলও একসাথে
পরবর্তী নিবন্ধদৈনিক গ্যাস উৎপাদন বাড়বে ৬ কোটি ঘনফুট