শ্রাবণ, খুব করে চেয়েছিলাম, ফিরে এসো চেনা রূপে। বড্ড দেরী করে এসেছো প্রিয়,বড্ড অবেলায়। তোমার প্রতীক্ষার প্রহর শেষে ভীষণ রুদ্ররূপে। এতটা রুদ্ররূপে তোমায় তো চাইনি প্রিয়। অপরাধ করেছি, সেই অপরাধের যোগ্যতম দণ্ডে দণ্ডিত করছো তবে? আমাদের ভীষণ নোংরা অপরাধ। তোমায় বরণ করে নেবার মতো, তোমায় ধারণ করবার মতো যোগ্যতম হয়ে উঠতে পারিনি। শহর থেকে গ্রাম নির্বিচারে ভরাট করেছি জলাশয়। এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে শহর, গ্রাম। ঋতুচক্রের আবর্তনে তোমার অস্তিত্ব ভুলেই গেছে এদেশের মানুষ। তাই তোমাকে বরণের যথাযথ আয়োজন আর হলো না। তাতেই কি ভয়ানক হয়ে উঠলে প্রিয়? তবে তোমার তো অত ভয়ানক, নির্দয় হওয়া সাজে না বলো? তুমি শীতল, তুমি মায়াবী, তুমি বারেবারে বিরহের সেতার বাজাও হৃদয়াকাশে।
তোমায় এই প্রতিশোধপরায়ণ রূপে মানায়? এতটা আঘাতে, শাস্তিতে, দলিত, মথিত করে দিলে তুমি। আমার কন্যা, পুত্র, ভাই, মা, বাবা ভেসে গেলো তোমার তীব্র রোষাণলে। আমার ভীষণ প্রিয় পাহাড় তার শরীর হারিয়ে পঙ্গু হয়ে রইলো। আমার চিরচেনা গ্রাম আজ ধ্বংসলীলার চিহ্ন বুকে নিয়ে বসে আছে। স্তব্ধ, নির্বাক লাখ লাখ চোখে এতটা অনিশ্চয়তা, এতটা হাহাকার, এতটা তীব্র অসহায়তা। কী করে বাঁচি বলোতো? কী নিয়ে বাঁচি? এতটা ভীষণ রুদ্র, নির্মম, নির্ভয়ে ধেয়ে চলা শ্রাবণ, এবার ক্ষান্ত হও। ক্ষমা করো, অপরাধ যত। দলিয়ে, মাড়িয়ে, নি:শেষ করে দিওনা প্রকৃতিমাতার অনন্ত, অফুরান অমৃত ভাণ্ডার। তোমার রুদ্র প্রতাপে দিশেহারা হচ্ছি খুব,শান্ত হও প্রিয়!
শান্ত হও! ফিরে এসো তোমার চিরচেনা স্নিগ্ধ শীতল রূপ নিয়ে, বারবার। ফিরে এসো উত্তর –পূর্ব কোণের আকাশে, কৃষ্ণ বর্ণের মেঘে। ফিরে এসো আমার প্রিয় সেই নামহীন গোত্রহীন ফুলের মাদকতায়। তৃষ্ণায় কাতর চাতকের আহ্বানে, প্রচণ্ড খরতাপে একরাশ শীতল হাওয়ায় ভেসে ভেসে। বিরহী যক্ষের দূত হয়ে হে শ্রাবণ।
আগামী শ্রাবণে হয়তো শুধরে নেবো ভুল যত। হয়তো আবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে। আমরা তো শোধরাতে জানি না। আমরা পারি না ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে। তবে কি আবারও সেই ভীষণ রুদ্র প্রতাপে ধ্বংসলীলায় মাতবে প্রিয়? আর নয়! তুমি সুন্দর, তুমি স্নিগ্ধ, তুমি শীতল শ্রাবণ! তোমার আঘাতও হবে ফুলের আঘাত। তোমার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার সংস্পর্শে যদি আমরা সুন্দরতম হয়ে উঠতে পারি। আশা রইলো প্রিয় শ্রাবণ!