শ্বশুরবাড়ি এলাকায় মিলল প্রবাসীর মাটিচাপা দেয়া লাশ

১৩ দিন আগে তিনি নিখোঁজ হন স্ত্রী, শালিকা ও শাশুড়ি গ্রেপ্তার

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১৫ মার্চ, ২০২৩ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ার পুটিবিলায় নিখোঁজের ১৪ দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ির নিকটে মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় মনছুর আলী (২৭) নামে এক দুবাই প্রবাসীর গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পহরচান্দা ছোট ধলিবিলা হাসনা ভিটার পাহাড়ি টিলার এক ঝিরি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রবাসী মনছুর আলী একই ওয়ার্ডের পূর্ব পহরচান্দা সেকান্দার পাড়া এলাকার ফরিদ আহমদের পুত্র ও দুই সন্তানের জনক। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, নিহত প্রবাসীর স্ত্রী রিনা আক্তার (২৩), শাশুড়ি ছায়েরা খাতুন (৪৭) ও শালিকা রুমন্নান আক্তার (১৬)। জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে দেশে আসেন মনছুর। পরদিন ১ মার্চ সন্ধ্যায় আমিরাবাদে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হন। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বন্ধ ছিল মুঠোফোনও। গত ২ মার্চ নিখোঁজ প্রবাসীর বোন বুলু আক্তার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং পরে গত ৮ মার্চ অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, আর্থিক লেনদেন, অনৈতিক সম্পর্কের সন্দেহ ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে প্রবাসী মনছুর আলীর বিরোধ চলছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে পুটিবিলা ইউনিয়নের ফকির হাট এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তি সিএনজি চালিত অটোরিঙাযোগে তাকে অপহরণ করে। এ তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের স্ত্রী, শাশুড়ি ও শালিকাকে পুলিশ হেফাজতে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভিকটিম নিখোঁজ প্রবাসীর অবস্থান সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে মনছুর আলীর সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড পর্যালোচনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদেরকে নিয়ে পহরচান্দা এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পুলিশ ও স্থানীয় ২০২৫ জন ব্যক্তি লোকালয় থেকে দুর্গম পাহাড়ি টিলার পার্বত্য বান্দরবানের কেয়াজুপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে অভিযানকালে আসামিদের তথ্য মতে তাদের বাড়ি থেকে আনুমানিক ৩শ গজ দূরে পহরচান্দা পাহাড়ি টিলার পার্শ্ববর্তী ঝিরিতে মাটিচাপা ও উপরে ঝোঁপঝাঁড় দেয়া অবস্থায় নিখোঁজ প্রবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের ভাই খোরশেদ আলম তার মরদেহ সনাক্ত করেন।

এ সময় সাতকানিয়া সার্কেলের অতিক্তির পুলিশ সুপার শিবলী নোমান, লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক, এসআই শরিফুল ইসলাম, এসআই যুযুৎসু যশ চাকমা, এসআই মো. নুরুন নবী ও এএসআই মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। নিখোঁজ প্রবাসীর মরদেহ সন্ধান পাবার খবরে আশপাশের বহু লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় জমান।

নিহতের ভাই খোরশেদ আলম জানান, দেশে ফিরে পরদিন নিখোঁজ হন তার ভাই। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে তাকে অপহরণের পর হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, লাশে পচন ধরে গেছে। সুরতহালকালে নিহতের মাথার ডান পাশে বড় ধরনের কাটা জখম, দুই কান, নাক, মুখ ও থুতনি শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন লক্ষ করা গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে কাপড় ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধমাটিরাঙায় কয়লাসদৃশ বস্তুর সন্ধান