দেবর, ভাবি ও শিশু সন্তানের একসাথে পাশাপাশি কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শোকে স্তব্ধ গ্রামবাসী এখনো হুহু করে কাঁদছে। স্বজনরা অনেকে আচড়ে পড়ছে তাদের কবরে। পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার দুই দিন পার হয়েছে। আগামীকাল তাদের ৪ দিনের দোয়া। তবুও শোক যেন কাটছে না ওদের। ৩ বছরের ছোট্ট শিশু মানারুল ইসলাম তাওহীদ, মা ফারহানা আক্তার সুমি ও তাদের পাশেই দেবর সাইফুল ইসলামকে শায়িত করা হয়েছে। একই পরিবারের সকলের প্রিয় এই তিন মুখ এখন মাটির নিচে চাপা। সেই বেদনা এখনো যেন দুঃস্বপ্ন স্বজন ও গ্রামবাসীর কাছে।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা গেছে, এক বছর আগে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি সিএনজি টেক্সি নেন জিয়া উদ্দিন বাবলু। সেই টেক্সি চালিয়ে গত শনিবার দুপুরে চাচাতো ভাইসহ সপরিবারে শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত খেতে যাচ্ছিলেন। পথে বারইয়ারহাট–খাগড়াছড়ি সড়কের চিনকিরহাট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালুবোঝাই একটি পিকআপভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় সিএনজি টেক্সিটির। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাবলুর চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম শাহিন (১৭)। বাবলুর স্ত্রী ফারহানা আক্তার সুমি (২৫), মেয়ে কায়সার জাহান তানিশা (৭) ও ছেলে মানারুল ইসলাম তাওহিদকে (৩) গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান বাবলুর স্ত্রী ফারহানা আক্তার সুমি ও ছেলে মানারুল ইসলাম তাওহিদ। নিহত এবং আহতরা সবাই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মধ্যম বামনসুন্দর গ্রামের বেলু বলী বাড়ির বাসিন্দা।
একই বাড়ির তিনটি মানুষের একসাথে মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ স্বজন ও গ্রামবাসী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেঁচে থাকা জিয়া উদ্দিন বাবলুর বৃদ্ধা মা বিবি হালিমা বিলাপ করতে করতে বলেন, সবার আদরের ছোট নাতি ও মেয়ের মতো আমার পুত্রবধূকে হারিয়ে ফেলেছি। মৃত্যুর সাথে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছে ছেলে এবং নাতনি। ওদের কিছু হলে আমি কী নিয়ে বাঁচবো?
নিহত সাইফুল ইসলাম শাহিনের বাবা নুরুল করিম বলেন, আমার ৬ জন ছেলে–মেয়ের মধ্যে সবার ছোট শাহিন। সে একটু সহজ সরল। যে যেদিকে যেতে বলে সেদিকে চলে যায়। শনিবার দুপুরে আমাদের কাউকে কিছু না বলে আমার ভাতিজার সাথে তার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গেছে।
সেখানে যাওয়ার পথে একটি বালুবোঝাই পিকআপভ্যানের সাথে টেক্সির সংঘর্ষে আমার ছেলে মারা যায়।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, নিহত সাইফুল ইসলামের বড় ভাই মোহাম্মদ রুবেল বাদী হয়ে পিকআপের চালক শাহাবুদ্দিনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সত্যিই বেদনাদায়ক। তিনি বলেন, পিকআপ চালককে আটকে অভিযান চলছে।