সাঙ্গ হলো খেলা, ভাঙল মেলা। নিয়ম অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার ছিল জব্বার মিয়ার বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলার শেষ দিন। কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসা দোকানিরা চান, মেলা অন্তত আরো একটা দিন বাড়ুক। আর এমনিতে মেলার পাট গুটাতে গুটাতে কেটে যাবে কয়েকদিন। তবে মেলা কমিটির সিদ্ধান্ত, মেলার সময় বাড়ানো হবে না।
তিন দিনের এ মেলার শেষ দিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা কম লাভে, কেনা দামে ছেড়ে দিচ্ছেন পণ্যসামগ্রী। এ সুযোগে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। সরেজমিনে দেখা যায়, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, মাটির টেপা পুতুল, কাচের চুড়ি, পাট পণ্যের পাশাপাশি কাঠের পুতুল, হাতপাখা, মুড়ি-মুড়কি, বাঁশি, শিশুদের খেলনা, টমটম গাড়ি, ইমিটেশনের গহনা, শীতলপাটি, গাছের চারা, মাছ ধরার চাঁই, ডালা, কুলা, দা-বঁটি, প্লাস্টিকের ফুলসহ বাহারি সব জিনিস কিনে নিচ্ছেন মানুষজন। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের রকমারি শোপিসের প্রতি আগ্রহ বেশি দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের। এবার খাট-পালঙ্ক, কাঠের আসবাবপত্র কম। কম দেখা গেছে ফুলের ঝাড়ু বা নারকেল পাতার শলার ঝাড়ুও। বেশি ভিড় দেখা যায় মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্রের দোকানে।
করোনার কারণে দুই বছর হয়নি শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা। এবার স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে আয়োজিত হয় এ মেলা। এখান থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ এক বছরের গৃহস্থালি টুকিটাকি সংগ্রহ করেন। লালদিঘির পেট্রোল পাম্প এলাকায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র বেশি। ঢাকা, শাহবাগ, সাভার, বরিশাল, কুমিল্লা থেকে মেশিন, ডাইস, হাতে তৈরি রকমারি মাটির জিনিস নিয়ে এসেছেন অনেকে। তাদের একজন দীপু। তিনি জানান, আজ মেলার শেষ দিন হওয়ায় কেনা দামে ছেড়ে দিতে হচ্ছে জিনিস। আমাদের অনুরোধ অন্তত একটা দিন মেলা বাড়ানো হোক।
কুমিল্লার হোমনা থেকে ৫শ বাঁশি নিয়ে আসা লিটন জানালেন, তিন দিনে সব বাঁশি বিক্রি হয়ে গেছে।
ঢাকা থেকে ফুলের ঝাড়ু, বেতের ঝুড়িসহ গৃহস্থালি নানা সামগ্রী নিয়ে এসেছেন লায়লা বেগম। তিনি বলেন, আমি শুক্রবার এসেছি। শুরু থেকেই বিক্রি হচ্ছে। আমাদের যদি এক/দুদিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভালো হয়।
করোনার কারণে গত দুই বছর বাদে প্রায় ৪০ বছর ধরে মেলায় আসছেন বরিশালে তমাল পাল। তিনি এনেছেন মাটির তৈজসপত্র, খেলনা। তিনিও চান মেলার সময়সীমা বাড়ানো হোক।
তবে প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী আজাদীকে বলেন, মেলার সময় বাড়বে না। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে এক হাজার ব্যবসায়ী এই মেলায় এসেছেন। মঙ্গলবার রাত ১২টায় জব্বারের বলী খেলাকে ঘিরে তিন দিনের বৈশাখী মেলা শেষ হবে। ভোরের মধ্যে সড়কের আশপাশ থেকে সব দোকানপাট উঠে যাবে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা মেলার সময় অন্তত একদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারে সিটি মেয়র রেজাউল করিমের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সিএমপি কমিশনারের সঙ্গেও কথা হয়েছে। রমজান ও ঈদের কারণে সময় বাড়ানো হচ্ছে না।