শেষ বর্ষার আর্তনাদ

জাহানারা মুন্নী | বুধবার , ১৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

বর্ষার অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম পুরোটাই এখন গভীর প্লাবিত অঞ্চলে পরিণত। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে মানুষগুলো। এমন অতর্কিত বন্যার জন্য প্রস্তুত ছিলো না তাঁরা। অতীতে বন্যার এমন ভয়াবহতার কথা শোনেননি কেউই। বিদ্যুৎ ও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, যার ফলে গ্রামে বসবাসরত আত্মীয়স্বজনের খোঁজ খবর নিতে পারছে না বেশীরভাগ মানুষ। ঘরে ঘরে অসহায়ত্ব বিরাজ করছে। ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় নিয়ে বর্তমান করুণ কঠিন সময় পার করছে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এতটুকু মাথা গোজার ঠাঁইও নেই। প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে কয়েক পরিবার। চিরতরে হারিয়ে গেছে কারো বাবা ভাইবোন। নিখোঁজ অনেকেই। বর্ষার সিক্ত বরিষণ এই সময়ে বন্যা কবলিত অঞ্চলের মানুষদের আর্তনাদের দুঃখের করুণ সুর জাগানিয়া।একদা আমার পূর্বপুরুষ, দাদাদাদি বাবাচাচাদের জন্মভিটে তাঁদের জীবনকালের স্মৃতি বিজড়িত স্থান ছিলো বাজালিয়া অঞ্চল। আমার মাএর চার সন্তানের জন্ম এইখানের বসতঘরে। দাদী মাবাবার শেষ বিদায়ের সব আনুষ্ঠানিকতাও এই চালের নীচে থেকেই হয়েছিলো। সেই চোখজুড়ানো সুন্দর মুঠোভরা প্রশান্তির মাটির ঘরটি ভয়ংকর বন্যার স্রোতে মাটিতেই লুটিয়ে পড়েছে। চারপাশে পাকা দালান হলেও পূর্বপুরুষের স্মৃতি চিহ্নটি টিকে থাকবে মনেপ্রাণে তাই চাইতাম আমরা ভাইবোনেরা। হৃদয়ভাঙ্গা অশ্রুজলেই শেষস্মৃতির অবসান। আমার শৈশব শেকড় শঙ্খ পাড়ের মানুষ আজ বড্ড অসহায়। শঙ্খ তার নিজ গতিতেই বয়ে যাচ্ছে। এই নদীকে দায়ী করার কোনো অবকাশ আমি দেখিনা। বরং দিনে দিনে আমরাই ময়লা আবর্জনা দিয়ে বড় বড় খাল ও নদীগুলোকো ধ্বংস করছি। আবর্জনা পরিচ্ছন্নতা নিষ্কাশন ব্যবস্থায় যথেষ্ট লোকবল নিয়োগে অদক্ষতা, মনোযোগ ও আন্তরিকতার অভাব, নাগরিক উন্নয়ন প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অদূরদর্শীতায় এজন্য দায়ী বলে আমার বিশ্বাস। বন্যা কবলিত দূর দুর্গম এলাকায় কোনো ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। আহা কী যে মানবেতর দিন পার করছে মানুষগুলো! আর আছে সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়ের ভয়। সক্রিয় হয়ে উঠছে চোর ডাকাতেরা, যুক্ত হয়েছে সকল আতংক। মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি ইতোমধ্যে মানবিক সংস্থা সংগঠনগুলো ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। তাঁদের সাথে যোগাযোগ রেখে আসুন, যে যার স্থান থেকে যেভাবে পারি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। খোলা আকাশের নীচে অবস্থানরত মানুষগুলোর বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রামে পাশে দাঁড়ায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা পরিস্থিতির সহসা উন্নতির জন্য মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীর্ণদেহী লড়াকু
পরবর্তী নিবন্ধবাবা