শূন্যস্থান পূরণ

নাজনীন লাকী | শুক্রবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ at ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

কাব্যর মা অসীম আকাশের পানে চেয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। রাতে তার চোখ সরে না আকাশ থেকে। মেঘলা দিনের রাতের আকাশ তার ভীষণ অপছন্দ। ওই দিনটিতে সে আকাশে তারা দেখতে পায় না। উদাসী মন আরো উদাস হয়। আজকের দিনটি তার জন্য বিশেষ দিন। মন্দের বিশেষ দিন। আজকের দিনের ৫ বছর আগে এক বিকেলে ছাদ বাগানে বাগান পরিচর্যার কাজ করছিল মালতি। সাথে ছিল ৪ বছরের কাব্য। সারাক্ষণ এদিক ওদিক ছোটাছুটি আর মাকে এটা সেটা করে বিরক্ত করছিল। গাছে ফুল বা ফল কলিতে ছিঁড়ে ফেলতে তার ভীষণ আনন্দ। মালতি যতই বোঝায় বাবা এত অল্প সময়ে গাছ যখন তার সন্তান হারা হয় তখন তার কষ্ট হয়। অবুঝ কাব্য কিছুতেই বোঝেনা এর মর্মার্থ। গোচরে বা অগোচরে এই কাজটি করে বেড়ায়। মালতি প্রায় বকাঝকা করে। সেদিনও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু সেদিনের বকাটি সত্য হয়ে গেল। মালতি বলেছিল ‘তোকে যদি কেউ মার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলে তোর মার কেমন লাগবে?’ অবুঝ কাব্য তা বুঝলই না। সে অকালেই ঝরে পড়ল। বড়ো একটি টবের পেয়ারা গাছের ঢাল ছাদের বাইরের অংশে ঢাল মেলে দিল। সেখানে পেয়ারা দেখে ছিঁড়তে গেলে কাব্য ঢাল ধরে বাঁচতে চাইলো। কিন্তু না তার শেষ রক্ষা হলো না। মায়ের কোলে নিরাপদ শিশু সেদিন মায়ের কোল খালি করে চলে গেল।আজ সে অগনিত তারার মেলায় একটি ছোট্ট কাব্য তারা। গহীন অন্ধকারের উঁকি দেয়। মায়ের সাথে কথা বলে। মা প্রতিদিন অনুরোধ করে আর যেন কোন ফল বা ফুল ছিঁড়ে না ফেলে। কাব্য দুষ্টামি করে বেড়ায় সারা আকাশে। কিন্তু মাকে আগের মত আর বিরক্ত করে না। ওই আকাশেই থাকে। মাঝে মাঝেই সেই তারাটি অনেক দূরে সরে যায়। কিংবা স্থির হয়ে থাকে কিছুদিন। শূন্যস্থান পূরণে অন্য তারা সেখানে স্থান নেয়। মালতি গর্ভবতী আবার। হয়তো শূন্যস্থান শূন্য থাকবে। কিংবা পূরণ হবে অন্য কাব্য ধারায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রামকে ভালোবাসুন আপন পরশে
পরবর্তী নিবন্ধআগস্ট বিপ্লবের অর্জনকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না