প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলে গ্রামবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে ইছামতি খালের উপর নির্মাণ করেন বাঁশের সাঁকো। কিন্তু বর্ষা এলেই তা আবার পাহাড়ি পানির ঢলে ভেসে যায়। ভাঙা গড়ার মাঝে এভাবেই চলছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের শিয়ালবুক্কাবাসীর নিত্যদিনের চলাচল। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলে এলেও এলাকাবাসীর এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, এপারে রাজানগর ওপারে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নের মাঝে ইছামতি নদী। দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগে এ নদীই একমাত্র বাধা। তাই গ্রামবাসী প্রতি বছর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করে বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে কৃষক, শিক্ষার্থীসহ সবাই তাঁদের প্রাত্যহিক প্রয়োজন সারেন। কিন্তু বর্ষা এলেই সেই সাঁকো নদীতে হারিয়ে যায়। সাঁকো ভেসে গেলেও থেমে থাকে না জীবন। গ্রামবাসী নিজেদের প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই তখন নৌকায় পারাপার হয়। বর্ষার পর আবারও তৈরি করেন সাঁকো। একটি পাকা সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ রয়েছেন স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, খরস্রোতা ইছামতির পশ্চিম পাশে শিয়ালবুক্কা গ্রাম। তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসলাদি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি দিয়ে যাতায়াত করে। অন্যদিকে শিয়ালবুক্কায় একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর বাকী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর অপর পাড়ে। সেখানে গিয়েই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হয়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করুণ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় ডেলিভারি রোগীসহ অসুস্থদের।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবে সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করা গেলেও প্রতি বর্ষায় সাঁকোটি ঢলের তোড়ে ভেসে যায়। বর্ষাকালে বাঁধভাঙ্গা বন্যায় দুই কূল ভেসে যায়। তখন একমাত্র অবলম্বন নৌকা।
জীবনকে হাতে নিয়ে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তাদের জীবন চলে। আর কোন উপায় নাই। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন থেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিম উদ্দিন (৪২) বলেন, ছেলেমেয়েরা সাঁকো পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। বর্ষাকালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। একটি পাকা সেতু নির্মাণ করলে এলাকার লোকজন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারত।
কৃষক নবাব মিয়া বলেন, ভোটের সময় সব নেতাই সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু ভোটের পর তাঁরা আর সেতু নির্মাণ করে দেন না।
রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার বলেন, শিয়ালবুক্কায় ইছামতি খালের ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণে প্রক্রিয়া চলছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম জানান, উত্তর রাঙ্গুনিয়ার শিয়ালবুক্কায় সাঁকো দিয়ে মানুষ খুব কষ্টে যাতায়াত করছেন। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। এর প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ব্রিজ নির্মাণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই তা বাস্তবায়ন করা হবে।