সমুদ্রগামী জাহাজের বাঙ্কারিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে দেশে প্রথম বারের মতো আমদানি হয়েছে লো–সালফার মেরিন ফুয়েল। কিন্তু খালাসের পর শুল্কায়ন জটিলতার কারণে এখনো বিপণনই শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। কবে নাগাদ বিপণন হবে, তার উত্তরও জানা নেই কারো। মূলত আন্তজাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে আমদানিকৃত মেরিন ফুয়েল শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশি জাহাজগুলোতে সরবরাহ দেওয়ার কথা। কিন্তু নীতিমালায় শুল্কযুক্ত হিসেবে সরবরাহ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকায় বিপাকে পড়েছে বিপিসির তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান। তবে অভিযোগ উঠেছে, শুল্কায়ন জটিলতা রেখেই মেরিন ফুয়েল সরবরাহের জন্য তদবির শুরু করেছে একটি প্রভাবশালী মহল।
জানা যায়, নৌপথে চলাচলকারী জাহাজে ব্যবহৃত জ্বালানি সংগ্রহ করাকে বাঙ্কারিং বলা হয়। বাংলাদেশে সমুদ্রগামী বিদেশি জাহাজে দীর্ঘদিন ধরে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং সুবিধা ছিল। তবে বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বাঙ্কারিংয়ে জ্বালানির দাম বেশি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি জাহাজগুলোতে বাঙ্কারিং বন্ধ থাকে। শেষতক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কারণে লো–সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেয় বিপিসি। আন্তর্জাতিক নৌ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) বিশ্বব্যাপী সমুদ্রগামী জাহাজের সালফার নিঃসরণ কমানোর জন্য তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ (৩.৫০%) সালফার ফুয়েল অয়েলের পরিবর্তে লো–সালফার হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) হিসেবে দশমিক ৫ শতাংশ (০.৫০%) মেরিন ফুয়েল বাঙ্কারিং করার নির্দেশনা দেয়। এ নিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার ‘বাংলাদেশের জলসীমায় যাতায়াতকারী দেশি বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে জ্বালানি সরবরাহের জন্য বাঙ্কারিং নীতিমালা’ গেজেট প্রকাশ করে। তবে বাংলাদেশে আসা বিদেশি জাহাজগুলোর বাঙ্কারিংয়ে অনীহার কারণে লো–সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং নিশ্চিতের বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে। সর্বশেষ দেড় লাখ টন মেরিন ফুয়েল আমদানির পদক্ষেপ নেয় বিপিসি। ৭৫ হাজার টন সরাসরি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং ৭৫ হাজার টন ‘জি টু জি’ পর্যায়ে আমদানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার টন লো–সালফার মেরিন ফুয়েল নিয়ে থাই জাহাজ ‘এমটি টিএমএন প্রাইড’ ১৪ সেপ্টেম্বর মেঘনা অয়েলের ৫নং ডলফিন জেটিতে খালাসের জন্য প্রবেশ করে। ওইদিন বিপিসির চেয়ারম্যান আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খালাস প্রক্রিয়া উদ্বোধন করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর জাহাজ থেকে মেরিন ফুয়েল খালাস শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত বিপণন শুরু হয়নি।
আমদানিকৃত মেরিন ফুয়েল খালাসের পর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ছাড়পত্র নিতে গেলে বাধার মুখে পড়ে বিপিসি। কারণ বাঙ্কারিং নীতিমালায় মেরিন ফুয়েলকে শুল্কযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা ছিল। নীতিমালার ৭(গ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংকার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে মূল্য পরিশোধের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাংকার গ্রহণের পূর্বে ইতিপূর্বে গ্রহণকৃত বাংকারের তথ্য প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তেল বিপণন কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত সকল তেল শুল্কযুক্ত হিসেবে সরবরাহ করা হবে।’
এ ব্যাপারে বিপিসির পরিচালক (বিপণন, অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘নীতিমালা জটিলতার কারণে কাস্টমস ছাড়পত্র নেওয়া সম্ভব হয়নি। সাধারণভাবে নীতিমালায় শুল্কমুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু উল্লেখ রয়েছে শুল্কযুক্ত। ২০১৪ সালে নীতিমালা হয়েছে। তখন বিষয়টি খেয়াল করা হয়নি। এখন বিষয়টি সংশোধনের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। এরপর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে লিখবে। সংশোধন হলেই বাঙ্কারিং শুরু হবে।’
কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ছাড়া মেরিন ফুয়েল সরবরাহ নেওয়ার তোড়জোড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নীতিমালা সংশোধনের আগে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পাওয়া সম্ভব হবে না। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া পর্যন্ত মেরিন ফুয়েল সরবরাহ দেওয়ার সুযোগ নেই।’