শুল্ক বিরোধ না মিটলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা নয় : ট্রাম্প

ভারতীয় পণ্যে আপাতত না অ্যামাজন ওয়ালমার্ট টার্গেট ও গ্যাপের

| শনিবার , ৯ আগস্ট, ২০২৫ at ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করার একদিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শুল্ক নিয়ে বিরোধ যতক্ষণ না মিটছে ততক্ষণ নয়া দিল্লির সঙ্গে কোনো ধরনের বাণিজ্য আলোচনা হবে না। বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এশিয়ান নিউজ এজেন্সির (এএনআই) এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

শুল্ক বাড়িয়ে ৫০% করার পর বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরুর প্রত্যাশা করছেন কিনা, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এ প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত এটার (শুল্ক) সমাধান না হয়, ততক্ষণ না। খবর বিডিনিউজের।

এর আগে বুধবার হোয়াইট হাউসের জারি করা নির্বাহী আদেশে ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরও ২৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা আসে। এখন সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য ঢোকাতে নয়া দিল্লিকে ৫০% সম্পূরক শুল্ক গুণতে হবে। নতুন ২৫% শুল্ক বসানোর এ পদক্ষেপের পেছনে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক উদ্বেগকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে মার্কিন প্রশাসন, তবে নয়া দিল্লির ওপর তাদের ক্ষোভ মূলত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখা।

আদেশে বলা হয়েছে, সরাসরি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভারত যে রাশিয়ার তেল আমদানি করছে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বাভাবিক ও অসাধারণ হুমকি হিসেবে হাজির হয়েছে, যে কারণে জরুরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রথম দফায় ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে যে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিলেন তা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। বাকি ২৫% কার্যকর হওয়া শুরু হবে ২৭ আগস্ট থেকে। তবে যেসব পণ্য এখন পথে রয়েছে সেগুলো এবং ছাড় পাওয়া কিছু পণ্য এই শুল্কের বাইরে থাকবে।

নির্বাহী আদেশে পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কিংবা ভারত বা অন্য কোনো দেশের পাল্টা ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্টকে যখন তখন এই শুল্ক বাড়ানোকমানো বা প্রত্যাহারের সুযোগও দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের এই নতুন শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, অর্থনৈতিক চাপে নয়া দিল্লি মাথা নোয়াবে না। আমাদের কাছে আমাদের কৃষকদের স্বার্থ সবার ওপরে। ভারত কখনোই তার কৃষক, মৎস্যজীবী ও দুগ্ধ খামারিদের স্বার্থের ব্যাপারে আপস করবে না। আমি জানি এর জন্য আমাদের চড়া মূল্য দিতে হবে, আমি তার জন্য প্রস্তুত। ভারত তার জন্য প্রস্তুত, নয়া দিল্লিতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এমনটাই বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

ভারতীয় পণ্যে আপাতত না অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট, টার্গেট ও গ্যাপের : ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর ভারত থেকে পণ্য নেওয়া স্থগিত করেছে ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, টার্গেট, গ্যাপসহ বড় মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা। সূত্রের বরাতে এনডিটিভি প্রফিট লিখেছে, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে চিঠি ও ইমেইল পেয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে পোশাক ও টেক্সটাইল পণ্য পাঠানো আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। বাড়তি শুল্কের বোঝা বহন করতে চান না মার্কিন ক্রেতারা; তারা এই ব্যয় রপ্তানিকারকদের ওপর চাপিয়ে দিতে চান।

উচ্চ শুল্কের কারণে খরচ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রগামী কার্যাদেশ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে; ফলে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।ওয়েলস্পান লিভিং, গোকালদাস এক্সপোর্টস, ইন্ডো কাউন্ট, ট্রাইডেন্টের মত বড় ভারতীয় রপ্তানিকারকরা তাদের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পণ্য বিক্রি করে কেবল যুক্তরাষ্ট্রে। ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্যও যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে এ খাতে মোট ৩৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির মধ্যে ২৮ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের এখন আশঙ্কা, তারা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের কাছে কার্যাদেশ হারাতে পারে। এ দুটি দেশ ২০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ছে।

গুণ্ডাকে ছাড় দিলে মাথায় চড়ে, ট্রাম্পকে কটাক্ষ চীনা রাষ্ট্রদূতের : ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পকে কটাক্ষ করেছেন নয়া দিল্লিতে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত সু ফেইহং। ‘গুণ্ডাকে এক ইঞ্চি ছাড় দাও, সে এক মাইল নিয়ে নেবে,’ বৃহস্পতিবার এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে মন্তব্যের সঙ্গে পোস্টে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর একটি মন্তব্যও জুড়ে দিয়েছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাম্পের শুল্কের পর ভারত রাশিয়ার সম্পর্কে জোর
পরবর্তী নিবন্ধযারা আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য কাজ করেন তাদের মৃত্যু নেই-মুহাম্মদ শাহ আলম