সঙ্গীতের সুরের মূর্ছনায় মানব মন আন্দোলিত হয়। গীত, বাদ্য ও নৃত্য এই তিন ললিতকলা বিদ্যার সমন্বিত রূপই সঙ্গীত। নৃত্যের ঝংকার সৃষ্টিতে যেমন বাদ্যের গুরুত্ব অত্যাধিক, তেমনি গুরুত্ব রয়েছে সুমধুর গীত পরিবেশনের ক্ষেত্রেও। তবে প্রতিটি বিষয়ে পারদর্শী হতে হলে প্রয়োজন গভীর অনুশীলন ও একনিষ্ঠ সাধনা। এই অনুশীলন ও সাধনা হওয়া চাই পদ্ধতিগতভাবে এবং একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর সঙ্গীতালয়ের মধ্য দিয়ে, তবেই একজন শিক্ষার্থী যথাযথভাবে নিজেকে বিকশিত করতে পারবে।
চট্টগ্রামে শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চার অন্যতম পাদপীঠ বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়। বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়ের সূচনা বেশ আগে হলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০০৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ডিসি হিলে বোধন আয়োজিত বসন্ত উৎসবের মধ্য দিয়ে। সূচনা লগ্ন থেকে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান, প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম, গুণীঁজন সংবর্ধনা, পঞ্চ কবির আসর, যশস্বী সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিষয়ক আলোকপাত, টিভি ও বেতারে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠান, বিভিন্ন রাগে সমবেত সঙ্গীত, তবলা লহড়া, একক সঙ্গীত, দ্বৈত সঙ্গীত, গিটার বাদন, বৃন্দ আবৃত্তি, একক ও দলীয় নৃত্য, রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণানুষ্ঠান, বসন্ত উৎসব ও জাতীয় দিবস পালন, সংবর্ধিত অতিথিদেরকে সম্মাননা স্মারক প্রদান, বীরশ্রেষ্ঠদের স্মরণানুষ্ঠান, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব ও স্বদেশ সমৃদ্ধময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে।
মানবিক বিকাশের ক্ষেত্রে সঙ্গীত শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। করোনার দুঃসময়ে মানুষ যখন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল তখন বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়ের কার্যকরী কমিটি নিজ উদ্যোগে চট্টগ্রামের সঙ্গীত শিল্পী, বিভিন্ন সঙ্গীতালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পরিবার, সমাজের অসহায় হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ‘ভালোবাসার উপহার’ সামগ্রী হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে মানবিক চেতনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয় শুধু সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি মানবতাবাদী সংগঠনও বটে। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর সুন্দর মন-মানসিকতা সৃষ্টি করে সুন্দর সৃষ্টিশীল সমাজ বিনির্মাণে নিয়োজিত থেকে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আরো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করা। যেখানে থাকবে সুন্দর ব্যবহার, শ্রদ্ধাবোধ, সঠিক অনুশীলন, সময়জ্ঞান ও দেশপ্রেম।
সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে সঠিক গুণাবলী বিকাশে সঙ্গীতের ইতিবাচক অবদান রয়েছে। শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চা সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার জন্য বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক উস্তাদ রিষু তালুকদার দিন-রাত কাজ করে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের নিয়মিত তালিকাভুক্ত শিল্পী। ছাত্রছাত্রীদের সতেরো বছর শুদ্ধ সঙ্গীত অনুশীলনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আরো প্রসারিত করার লক্ষ্যে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থ ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দীপিকা’ প্রকাশ করেন।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জ্ঞান একজন সঙ্গীত শিল্পীর বোধ, মেধা ও জ্ঞানকে শাণিত করে। গুরুর সান্নিধ্য ছাড়া কখনো পরিপূর্ণ শিক্ষা লাভ করা যায় না, তথাপি একটি ভালো গ্রন্থের সহায়তায় একজন শিক্ষার্থী ও শিল্পীর জ্ঞানকে আরো বেশি শাণিত করতে পারে।
বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়ের কার্যকরী কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, লায়ন কৈলাশ বিহারী সেন, পরিচালক উস্তাদ রিষু তালুকদার, পলাশ দে, জে. কে. সেন, সমীরণ সেন প্রমুখ।
বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়ের সৃজনশীল সকল কর্মকাণ্ড আরো বেগবান করার লক্ষ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি।