শীতকালীন সবজি আগাম বাজারে আনতে ব্যস্ত সীতাকুণ্ডের চাষিরা

৫ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে চাষ

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড  | শনিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ

শীতের আগেই বাজারে শীতকালীন সবজি নামাতে সীতাকুণ্ডের

কৃষকদের মধ্যে সবজি চাষের ধুম পড়েছে। আগাম শাকসবজি বাজারে তুলতে পারলে অধিক টাকা উপার্জন করা সম্ভব এ চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডে মোট ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ২৬৫০ হেক্টর জমিতে শিম ও ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে অন্যান্য ফসলের চাষ করেছে চাষিরা। গত বছর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম সবজি বিক্রি করে ব্যাপক লাভবান হয়েছিলেন কৃষকরা। এবারও কৃষকরা আগাম সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। শীতের শুরুর অনেক আগেই পটল, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন লাউসহ নানা প্রজাতির শীতকালীন সবজির আগাম চাষ শুরু হয়েছে।

উপজেলার উত্তরে বারৈয়াঢালা, সৈয়দপুর, সীতাকুণ্ড পৌরসভা, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে ব্যাপকহারে শাকসবজি চাষ হয়। সামপ্রতিক সময়ে চাষিরা সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় তারা শীতের আগাম চাষে ঝুঁকে পড়েছে। আগাম সবজির মধ্যে রয়েছে মুলা, বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, তিতা করলা, টমেটো, ঢেড়শ, পালংশাক ও পুঁইশাক ইত্যাদি। গত দুইদিন বৃষ্টি হওয়াতে সবজি চাষ আগের চেয়ে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বারৈয়াঢালা ও সৈয়দপুরের বিভিন্ন গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা ব্যাপকহারে শীতকালীন সবজি চাষ করছে। চারা তৈরি থেকে শুরু করে আগাম শাকসবজি রোপণে ব্যস্ত মহালংগা গ্রামের কৃষক অলি উল্ল্লাহ জানান, যে কোনো সবজি যদি মৌসুমের শুরুতে বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম বেশি পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে মুলা, লালশাক, তিতাকরলা, পালংশাক বাজারে আসতে শুরু করেছে। কৃষকরা পর্যাপ্ত দামও পাচ্ছে।

কেদারখীলের কৃষক সেলিম উদ্দিন বলেন, এই এলাকা সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত। ফলানো সবজি বিক্রি করতেও কোন বেগ পেতে হয় না। পাইকাররা ক্ষেতে এসেই সবজি কিনে নিয়ে যান। তবে অসময়ের বৃষ্টি বা শুকনো মৌসুমে মাঝে মাঝে পানি সংকটের কারণে আমাদের অসুবিধায় পড়তে হয়। এ ছাড়া আগাম সবজিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। তাই ফসলের দিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হয়।

পূর্ব সৈয়দপুরের গ্রামের নুর সোলেমান তার জমিতে বেগুনের চারা তৈরি করেছেন। বিশেষভাবে ছাউনি দিয়ে জমিতে এই চারা তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য এই নিয়মই পালন করতে হয়। এতে চারা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা যেমন কম থাকে, তেমনি চারাও সতেজ হয়ে ওঠে।

সীতাকুণ্ড পৌরসভা, বারৈয়াঢালা এবং সৈয়দপুরের কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে, কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। খেত থেকে আগাছা পরিস্কার এবং পর্যাপ্ত পানি দিচ্ছে। কেউ কেউ ফসলের উপর বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কীটনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি জমিতেই ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকরা খুব যত্ন সহকারে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে মাঠ থেকে পরিপূর্ণ ফল তুলতে আরো বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।

বাঁশবাড়িয়া থেকে বারৈয়াঢালা পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ১০হাজার

কৃষক পরিবার বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে থাকে। এতে ভালো ফলনও হয়। স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি রপ্তানি করছে এখানকার কৃষকরা। তবে সমস্যা একটি জায়গায়, কৃষি বিভাগে তালিকায় পাহাড়ি এলাকার কৃষকদের নাম নেই। কৃষি বিভাগের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। যার কারণে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে তাদের খরচও বেশি পড়ে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, শীতকালীন আগাম সবজি ফলনে কৃষকরা অপেক্ষাকৃত বেশি লাভবান হয়ে থাকে। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে কখনো কখনো সবজির ক্ষতি হয়ে থাকে তাই কৃষকদের সতর্ক থাকতে হয়। এছাড়া পোকামাকড়ের আক্রমণ ও অন্যান্য যেকোন সমস্যায় কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিভাসুতে কাল থেকে কমপ্লিট শাটডাউন
পরবর্তী নিবন্ধসাইকেল ও পড়ার টেবিল পেল ছাত্ররা