পরিবার শিশুদের প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান। শিশু একটু একটু করে বেড়ে ওঠে পরিবারে। শিশুরা কেমলমতি, জগতের যত শান্তি–প্রশান্তি এই বোধ একমাত্র শিশুদের জীবনেরই অনুপস্থিত। তাই তারা চঞ্চল, হাস্যোজ্জ্বল এবং দুরন্তমনা। যদিও শিশুর মাঝে কিছু সংখ্যক এর ব্যতিক্রম বৈকি। এই যে পরিবার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান এখন এই প্রতিষ্ঠান যদি শিশুর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তবে সেই পরিবারের শিশুর জীবনে শান্তি অশান্তির বোধ একটু হলেও বর্তমান।
আমাদের ছোটবেলার শিশুকাল আর বর্তমান শিশুকালের তফাৎ ব্যাপক। আমদের সময়ে আমরা পুতুলখেলা, বউছি খেলা কিংবা রেডিওতে গান শুনে বড়ো হয়েছি। এ বেলায় শিশুদের মোবাইল কেন্দ্রিক জীবন। খেলা সেতো মোবাইলে সীমাবদ্ধ। আমাদের সময়ে আমরা পড়তাম পাড়া শুদ্ধ মানুষ জানতো আমরা কতক্ষণ পড়াশোনা করি বা কতটা ভালো শিক্ষার্থী। এখনকার শিশুর নীরব পাঠই পছন্দ। রমজান মাস আসলেই টানা ১ মাস, ৭/১৫ দিন বন্ধ থাকতো স্কুল। কী যে মজার দিনগুলো ছিলো। বাবারা সব তারাবি পড়তে যেত। সেই সুযোগে বড়ো আপা, ফুফু, খালা, চাচীরা মিলে শিশুদের সাথে খেলায় মেতে উঠতো। কানামাছি, বউছি, হাডুডু, বরফ–পানি খেলা চলতো। আর এখন স্কুল বন্ধ হয় ২০/২৫ রমজানে। অথবা পরীক্ষা চলতে থাকে স্কুলে। রোজা রেখে শিশু ক্লান্ত, পড়তে ব্যস্ত এবং ধর্মের সাধনা কতটুকুই হয় তা প্রশ্নবিদ্ধ।
চাঁদ রাতে আকাশে চাঁদ না দেখলেই যেন ঈদ হবে না। ভোরে মসজিদে ভেসে আসা হামদ, নাত আর কলিজা মোচড়ানো অনুভূতি। বর্তমানে সচেতন শিশুরা উঠবো আর কি আরেকটু ঘুমিয়ে নিলেই ভালো। অনুভূতি আছে তবে তা কলিজা মোচড়ানো অনুভূতি নয়। ১/২ টাকা হতে শুরু করে ৫০/১০০ টাকা ছিলো বকশিস। বাসায় এসে গুনতে গুনতে হারিয়ে ফেলা কিংবা মা নিয়ে বলতো ঐ বঙে রাখলাম। দিন কয়েক পর মা বলতো বড়ো ইদুঁর এসে নিয়ে গেছে। সত্যি ভাবতাম তাই। ঈদের দিন ১ টাকা দিয়ে সুইংগাম আর সুইটবল (পাখির ডিম বলে জানতাম) কিনে এনে মজা করে খাওয়া হতো। বর্তমানে ৫০/১০০ থেকে ১০০০ টাকা বকশিস পেয়েও বাচ্চাদের মন ভরানো যায় না। সন্তুষ্টি লাভ শিশুদের সহজাত হওয়া দরকার। যা অতীতের শিশুদের ছিলো চরম। আর বর্তমানের ভাবনার বিষয়। তারা যে কতটুকু খুশি, কোথায় তাদের আনন্দ তার হিসাব করে কুল পাওয়া মুশকিল। বইপড়া ছিলো সেই সময়ের শিশুদের আনন্দের খোরাক। বন্ধুর বাসায় গিয়ে বই এনে পড়তো তারা। এখন শিশুরা বই পড়ে ক‘জনা ? তাও তাদের পছন্দের বই। ভুলেও জ্ঞান নির্ভর বই পড়তে তাদের অনাগ্রহ। যদিও সবার ক্ষেত্রে নয় তারপরও দেখা যায় তারা বইয়ের মাঝে আনন্দ তেমন পায় না। উপহার হিসেবে বই পেলে খুশি হয় বলে মনে হয় না। অতীতের শিশুদের বন্ধুরা জন্মদিনে বই উপহার দিত। এখন উপহার আছে সেটা বই হলে হাস্যকর মনে করে। বই তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পায়। উপহার হিসেবে এটা তাদের কাছে নগণ্য।
পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ নিয়ে জীবনের ভালো মন্দ এবং জীবনপ্রণালী। অতীত ভালো ছিলো বর্তমান ভালো নয় তা বলা মুশকিল। তবে এতটুকু বলা যায়, অতীতের শিশুদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও অনুভূতি আনন্দদায়ক ছিলো। আনন্দময় ছিলো। তারা ছিলো শিশুসুলভ ও অবুঝ যুগের হাওয়ায়। এখনকার শিশু অনেক ম্যাচিউরড। তাদের আনন্দে একটা ভাব আছে, পরিপক্বতা লক্ষণীয়। বাঁধনহারা আনন্দে তারা ভাসে না।
তবুও শিশু মানেই শিশু। হয়তো তাদের জন্য বড়োদের যতটুকু দায়িত্ব ও কর্তব্য তা যথাযথভাবে দিতে পারছেন না। কিংবা যুগের হাওয়া শিশুদের সাথে বড়োদেরও লেগেছে। সবশেষে অতীতে যেমন, বর্তমানে তেমন, ভবিষ্যতে ও তেমনি বলতে হবে–
‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’। শিশুদের জন্য পৃথিবী হোক বসবাস উপযোগী, আনন্দময় এবং সুখী সমৃদ্ধ পরিবেশ।