শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাসে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। গাইনোকোলজিস্টদের (প্রসূতি ও স্ত্রী রোগের চিকিৎসক) হাত ধরেই এই অগ্রগতি এসেছে। এক্ষেত্রে গাইনোকোলজিস্টদের অবদান অবশ্যই প্রশংসনীয়। অবস্টেট্রিক্যাল এন্ড গাইনেকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) চট্টগ্রাম শাখার ১৭তম সাধারণ সভা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন। গতকাল রাতে নগরের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওজিএসবি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি প্রফেসর রওশন আকতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহেনা আক্তার, চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, ওজিএসবি কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ফেরদৌসি বেগম, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী।
প্রফেসর কামরুন নেসা রুনার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওজিএসবি চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর নাসরিন বানু। বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সায়েবা আকতার এবং ওজিএসবির সভাপতি (নির্বাচিত) প্রফেসর ফারহানা দেওয়ান। অন্যান্যের মাঝে ওজিএসবির সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর গুলশান আরা, মা ও শিশু হাসপাতাল নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল করিম আজাদ, চমেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনোয়ারুল হক শামীম, চমেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া ও আইসিইউ বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. রঞ্জন কুমার নাথ, গাইনোকোলজিস্ট প্রফেসর মাহবুবুল আলম, প্রফেসর শামীমা সিদ্দিকা রোজী, চসিক মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের সাবেক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. প্রীতি বড়ুয়াসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ওজিএসবি চট্টগ্রাম শাখার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. এম এ তাহের খানকে সম্মাননা জানানো হয়। এরপরই প্রফেসর শামসুন নাহার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় অনুষ্ঠানে। এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করা শিক্ষার্থীকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদানে সিদ্ধান্ত নেয় প্রফেসর শামসুন নাহারের পরিবার। যা ওজিএসবি চট্টগ্রাম শাখার মাধ্যমে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চমেক ৫৮তম ব্যাচের ডা. নাফিসের হাতে গতকালের অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন প্রফেসর শামসুন নাহার ও তার ছেলে ডা. হাশেম রাব্বি। সম্মাননা অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন প্রফেসর ডা. ফাহমিদা ইসলাম চৌধুরী ও চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. শর্মিলা বড়ুয়া।
পরে চিকিৎসকদের পরিচালনা ও অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা রশীদ স্বাতি।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অবদানের কারণেই বাংলাদেশ দুটি আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যু কমাতে ওজিএসবি যদি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোনো কাজ করতে চায়, তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বক্তব্যে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্বকালীন এবং সামপ্রতিক সময়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ডাক্তারের মতো মহৎ পেশা আর হয় না। করোনার অতি ঝুঁকিপূর্ণ সময়েও আপনারা ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে গেছেন। এর জন্য আপনাদের প্রতি আমার সাধুবাদ। আপনাদের কারণেই দেশে আজ শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার অনেক কমে গেছে। আপনাদের এই অবদান অবশ্যই প্রশংসনীয়।
আমাদের ডাক্তাররা সবচেয়ে ভালো ডাক্তার উল্লেখ করে একুশে পদক জয়ী এম এ মালেক বলেন, তবে আপনাদের (ডাক্তারদের) প্রতি সাধারণ মানুষের একটি অভিযোগ শোনা যায়। তা হল- ডাক্তাররা সময় দেন না। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা রোগীদের একটু সময় দেবেন। তাদের সমস্যা বা কথাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। চিকিৎসা সেবা নিয়ে ডাক্তারদের শপথের (ওথ) কথাটিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেলেও শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যে চট্টগ্রাম এখনো অনেক পিছিয়ে উল্লেখ করে ওজিএসবি কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ফেরদৌসি বেগম বলেন, এর জন্য আমাদের সবাইকে আরো কাজ করতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে এখানেও অবশ্যই অগ্রগতি আসবে।