সীতাকুণ্ডে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এস এন করপোরেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আহমেদ উল্লাহ (৩৮) নামে একজন শ্রমিক মারা গেছেন। গতকাল রবিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান তিনি। এদিকে শিপইয়ার্ড এস এন করপোরেশনের দুর্ঘটনার পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার অ্যান্ড রি–সাইকেলিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) সদস্য সচিব নাজমুল ইসলাম।
এদিকে বিস্ফোরণে হতাহতের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশমালা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আট সদস্যের কমিটি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খানকে আহ্বায়ক এবং বাকি সাতজনকে সদস্য করা হয়েছে। তারা হলেন– শিল্প পুলিশের প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ–পরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক, সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন, সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক এস এম সাখাওয়াত হোসাইন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সহকারী পরিদর্শক শুভংকর দত্ত।
এদিকে বিডিনিউজের খবরে বলা হয়, সীতাকুণ্ডে এস. এন. কর্পোরেশন (ইউনিট–২) ও এমটি স্বরাজ্য স্ক্র্যাপ জাহাজের পরিবেশ ছাত্রপত্র স্থগিত করে গতকাল রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে জাহাজটি ভাঙার সময় বিস্ফোরণ হয়, সেটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা, যা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তর তুলে ধরেছে।
এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কেন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে না, সে বিষয়ে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
শনিবারের এ ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে আরও সাতজন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকি সাতজন হলেন– মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৮), আবুল কাশেম (৩৯), বরকাতুল্লাহ (২৩), আনোয়ার হোসেন (৪৫), খাইরুল ইসলাম (২১), আল আমিন (২৩) ও হাবিব (৩৫)।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, মধ্যরাতে দগ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে আমাদের এখানে আটজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। ভোরের দিকে আহমেদ উল্লাহ নামে একজন মারা যান।
তিনি আরও জানান, দগ্ধদের মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলমের শরীরে ৭০শতাংশ, আবুল কাশেমের শরীরের ৭০ শতাংশ, বরকাতুল্লাহর শরীরের ৬০ শতাংশ, আনোয়ার হোসেনের শরীরের ২৫ শতাংশ, খাইরুল ইসলামের শরীরের ৮০ শতাংশ, আল–আমিনের শরীরের ৮০ শতাংশ ও হাবিবের শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রসঙ্গত গত শনিবার সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি শিপইয়ার্ডে এসএন করপোরেশন নামে কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধ ও গুরুতর আহত হন ১২ শ্রমিক।