নির্বাচনী প্রচারে বক্তৃতা করার সময় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানের সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নারা শহরে এক ট্রেন স্টেশনের কাছে নির্বাচনী পথসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করা হয় ৬৭ বছর বয়সী আবেকে। গুলিবিদ্ধ আবে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়লে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা পর বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। আবে দুই দফায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি টানা সবচেয়ে বেশিদিন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০২০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিলেও ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) তার প্রভাব বিদ্যমান ছিল। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ তার নিয়ন্ত্রণেই ছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতেই নারা শহরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেলেন।
আবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করার পরও ৪১ বছর বয়সী সন্দেহভাজন হামলাকারী তেতসুইয়া ইয়ামাগামি ঘটনাস্থলেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, তবে অস্ত্রটি হাত থেকে ফেলে দেন। সেখানেই তাকে আটক করে ঘটনাস্থলে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, অস্ত্রটিও উদ্ধার করে। অস্ত্রটি হাতে তৈরি করা হয়েছিল বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে।
যেভাবে হত্যা : দুই দফা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশিদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা শিনজো আবের হত্যাকাণ্ড গোটা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, আবে যে স্থানে বক্তৃতা করছিলেন, সেটি রাজধানী টোকিও থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দূরে। তিনি নারার পুননির্বাচনে জাপান পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের বর্তমান সদস্য কেই সাতোর পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। সে সময় হঠাৎই দুটি গুলির আওয়াজে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। একটি গুলি আবের ঘাড়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আবে পড়ে গেলে তাকে কাছেই হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এনএইচকে জানিয়েছে, বক্তৃতার প্রায় মাঝামাঝি সময়ে আবেকে পেছন থেকে গুলি করা হয়, তিনি পড়ে যান আর রক্তপাত হতে থাকে। সেখানে থেকে দ্রুত তাকে নারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, আবে জাপানের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৫টা ৩ মিনিটে মারা গেছেন। আবের ঘাড়ের ডান দিকে গুলি লেগেছিল আর তার আঘাত হৃদপিণ্ড পর্যন্ত গভীর ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শরীরে কোনো বুলেট পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই দেশটির প্রভাবশালী এ রাজনীতিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আবের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন সন্দেহভাজন খুনি : যে নারা শহরে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে সেখানেই ৪১ বছর বয়সী ঘাতক তেতসুইয়া বসবাস করেন। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো এনএইচকেকে জানিয়েছে, সন্দেহভাজন জাপানের মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্সে ২০০৫ পর্যন্ত তিন বছর কাজ করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন তেতসুইয়া তদন্তকারীদের বলেছেন যে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।
পূর্বসূরির মৃত্যুতে বাক্হারা জাপানের প্রধানমন্ত্রী : জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে হত্যার ঘটনাকে বর্বরতা হিসেবে বর্ণনা করে কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। আততায়ীর হাতে আবের নিহত হওয়ার ঘটনায় ভাষা হারিয়ে ফেলার কথা জানিয়ে কিশিদা বলেছেন, একজন সেরা নেতা হিসেবেই জাপানকে সবচেয়ে বেশি দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন আবে। শিনজো আবের উত্তরসূরি হিসেবে তার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। অন্তরের অন্তস্থল থেকে আমি শোকগ্রস্ত।
বিশ্ব নেতাদের নিন্দা : জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় টুইট বার্তাসহ সামাজিক মাধ্যমে নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড, মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ প্রমুখ।