দেশে দেশে চুক্তি হয়। চুক্তি হয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিষ্ঠানের চুক্তি দুই রকমের। একটি সাধারণ এগ্রিমেন্ট যার আইনগত ভিত্তি আছে, আরেকটি হচ্ছে গড়ট বা মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং। গড়ট এর শিরোনামই বলে এটি বোঝাপড়ার বিষয়। এটা এক ধরনের জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট এর মতোই দুই পক্ষই যুক্তি বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর ধারণাগুলোকে মেনে চলেন। সারা পৃথিবীতেই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে যায় সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। এদের কাজকর্মকে এগিয়ে নেবার প্রচেষ্টা সবসময় চালু থাকে এই সমঝোতার ভিত্তিতে।
পৃথিবীর কোন প্রতিষ্ঠানই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় কোন স্বাধীন সার্বভৌম দেশও। ফলে সহযোগিতা দেশে দেশে যেমন হয় প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিষ্ঠানেরও হতে হয়। দেশে দেশে বাণিজ্যে যেমন ভারসাম্যহীনতা থাকে ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কেও ভারসাম্যহীনতা থাকতে পারে। চাহিদা মেটানোর এই ভারসাম্যহীনতা অনেক সময় আমাদের মেনে নিতে হয়। অর্থনীতিতে Trickle Down Theory বলে একটা কথা আছে, এর অর্থ হল উন্নত দেশের জ্ঞান বিজ্ঞান তথ্য, অর্থ, সম্পদ আস্তে আস্তে চুঁয়ে অনুন্নত দেশগুলোতেও কোন না কোন ভাবে পৌঁছায়। আর সহযোগিতাও এমনই। ধনী দেশগুলো যেমন উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুখাপেক্ষী, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য কারণে ঠিক তেমনই উন্নয়নশীল দেশগুলোও। ফলে বোঝাপড়ার অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থা আমাদের উভয়কেই সহযোগিতায় আবদ্ধ করে।
চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি একটি নবাগত বিশ্ববিদ্যালয়। নবাগত বটে, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ সঞ্চালনে এক প্রধান সহায়ক শক্তি। এই শক্তি যত মজবুত ও কার্যকর হবে, ততই বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থা দৃঢ় হবে। ফলে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শেখার আকর এই বিশ্ববিদ্যালয় যতই তার সামর্থ্য বিস্তৃত করবে ততই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যকে বিস্তৃত করবে।
আর এই অভিপ্রায় আমাদেরকে বিভিন্ন শিক্ষা ও শিক্ষা সহায়ক প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতার যত অবয়ব আছে তাকে অবলম্বন করতে বলে। ফলে দেশে এবং বিদেশে, আমারা সহযোগী খোঁজ করি, যাদের সান্নিধ্য আমাদের অগ্রগমনের সাথী হবেন।
প্রযুক্তি সতত পরিবর্তনশীল। প্রযুক্তি সামর্থ্যও পরিবর্তন হয়। অর্থনীতির ভূ- কেন্দ্রও পরিবর্তন হয়। অর্থনীতির নাভী কেন্দ্র যখন ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তখন, আমাদের থেকে দূরবর্তী দেশ হওয়ায়, ট্রান্সপোর্টেশন, সময় ও খরচের বিবেচনায় খুব সুবিধাজনক অবস্থান, আমাদের ছিলো না। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রতিবেশীর কাছ থেকে হুমকি ছিলো অর্থনীতিতে প্রতিবন্ধক। গণচীনের উন্নয়ন, সে প্রযুক্তি ও সমাজ – অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে জানান দেয়। দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের বিবেচনায় বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতি উন্নয়নের পার্টনার হতে পারে চীন, এমনকি আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায়ও চীন হতে পারে অত্যন্ত গভীর বন্ধু। দক্ষিণ এশিয়ার ভারসাম্যের সকল ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য বন্ধুত্বের ইচ্ছা থেকেই চীনের বেল্ট এন্ড ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির সূচনা। বলাবাহুল্য, প্রাচীন কাল থেকেই চীনের সিল্ক রুটকে কেন্দ্র করে, চীনের সামাজিক, অথনৈতিক উন্নয়নের যে যাত্রা, তাকে আধুনিক অবয়বে নিয়ে এসেছে, চীনের অথনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। আগে জানতাম, প্রযুক্তির ট্রিকল ডাউন (Trickle Down ) হয় পশ্চিম থেকে পূর্বে, এখন দেখতে পাচ্ছি, ট্রিকল ডাউন হচ্ছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। এই trickle Down এর সুযোগ বাংলাদেশ তো নিতেই পারে। বাংলাদেশের সাথে চীনের দূরত্ব খুবই নিকটবর্তী। চীনের শহর কুনমিংয়ে আকাশ পথে দুই ঘণ্টারও কম সময়ে পৌঁছুনো যায়। আমাদের মহামান্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের সম্ভাব্য উন্নয়নের অংশীদারত্বকে মনে রেখেই সম্ভবত চীনের সাথে রেল যোগাযোগের কথা বলেন।
বলা হয় Commercial Activities are the Life Blood of all Other Social Activities , অর্থ হলো, বাণিজ্য ও এর কর্মকাণ্ড সমাজের অন্য সমস্ত কাজের জীবনীশক্তি। আগেই বলেছি, আমাদের বিদেশী মুদ্রা অর্জনের এক বড় উপায়, তৈরি পোশাক শিল্প। দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তনের এই সময়ে, আমরা পিছিয়ে থাকবো যদি পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির পরিচয় না পাই ও এর পরিচালনায় পিছিয়ে থাকি। আর এজন্য আমাদের, নির্ভরশীল হতে হয় উন্নত প্রযুক্তির দেশের উপর। চীনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে এমনকি আমদের, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেও। এমন সুযোগ আমদের কাজে লাগাতেই হবে।
পোশাক শিল্পের এই অবস্থা থেকে অগ্রগমনের জন্য আমাদের তরুণদের পোশাক শিল্পের নয়া প্রযুক্তির সাথে সন্নিবেশ করতে গেলে এই শিল্পের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি প্রয়োজন শিক্ষার। উহান বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে আমাদের সহযোগী হতে পারে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাই, অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি শিক্ষায় অগ্রগামী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গড়ট স্বাক্ষর করে অনুমিত হয়, CBUFT এ থেকে নিম্নে বর্ণিত সুযোগ ব্যবহারে সমৃদ্ধ হবে।
চীন ও বাংলাদেশের উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি এবং চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (CBUFT ) -ফোকাস করা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি চুক্তি হলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিক্ষা কী কী লাভ পেতে পারে-সংক্ষিপ্ত জানান দেয়া গেলো।
জ্ঞান স্থানান্তর ও পাঠ্যক্রম সমৃদ্ধকরণ, বস্ত্র প্রকৌশল, ফ্যাশন ডিজাইন, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত পাঠ্যক্রমের এক্সপোজার, চীনের বৃহৎ-মাত্রার গার্মেন্ট প্রস্তুতিমূলক খাতের ভিত্তিতে কেস স্টাডি ও শিক্ষা উপকরণ প্রবেশাধিকার।
বাংলাদেশি প্রোগ্রামগুলোকে আন্তর্জাতিক মান ও শিল্পরাগের চাহিদার সাথে সঙ্গত করা। কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। জুটি বেঁধে প্রশিক্ষণ programs student ও faculty -এর জন্য যেমন-patterns ও পণ্য উন্নয়ন, প্রোডাকশন প্ল্যানিং, manufacturing , অটোমেশন, টেকসই ইত্যাদি।
Wuhan University ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে ফ্যাকালটি/ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালদের দ্বারা হাতে-কলমে শর্ট কোর্স ও ওয়ার্কশপ। গ্লোবাল ল্যাবেলিং ও সাপ্লাই চেইন সাপোর্ট অনুযায়ী টেস্টিং, সার্টিফিকেশন ও কমপ্লায়েন্স ক্ষমতা বাড়ানো।
গবেষণা সহযোগিতা ও উদ্ভাবন তাঁত প্রযুক্তি, কম পরিবেশগত প্রভাবসহ ডাইং, বর্জ্য হ্রাস ও সার্কুলার ফ্যাশনের ওপর যৌথ গবেষণা প্রকল্প। জ্ঞান-উপকরণের Laboratories , সরঞ্জাম ও সফটওয়্যার (textile analysis, garment fitting, CAD/CAM ) অ্যাক্সেস। -Student ও faculty exchange যা গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তার এবং প্রকাশনী আরও গতিশীল করে।
শিল্প সংযোগ ও ইন্টার্নশিপ সুযোগ
চীনের গার্মেন্ট প্রস্তুতকারী বা বাংলাদেশের অংশীদারি firms -এর সঙ্গে structured internship ।
সোর্সিং থেকে প্রোডাকশন ও লজিস্টিকস পর্যন্ত end-to-end supply chain -এর exposure ।
নেটওয়ার্কিং ও সম্ভাব্য নিয়োগকর্তা/সরবরাহকারীদের সঙ্গে পরিচিতি, মৎধফঁধঃবং-এর ঢ়ষধপবসবহঃ ৎধঃব বাড়িয়ে তোলা।
গুণমান নিশ্চিতকরণ ও মানকরণ
ISO/IEC, Lean, Six Sigma সহ আন্তর্জাতিক মান ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের গ্রহণ।
ক্রেতাদের চাহিদা/চূড়ান্ত প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে বাংলাদেশের ডিগ্রীগুলোর সামঞ্জস্যতা বৃদ্ধি।
ফ্যাকালটি উন্নয়ন
Bangladeshi faculty দের জন্য যৌথ নিয়োগ, sabbatical বা সংক্ষিপ্ত teaching visit-এর সুযোগ।
গ্লোবাল মেন্টরশিপ নেটওয়ার্ক গঠন ও শেখানোর পদ্ধতি উন্নয়ন।
ছাত্র-চলাচল ও বৈশ্বিক exposure
Semester /বছর ভরে পাঠক্রমে study abroad scholarship বা funded exchanges ।
সাংস্কৃতিক exposure , সফট স্কিল, ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের জন্য resume appeal বৃদ্ধি।
গবেষণা-শিল্প রূপান্তর
বাংলাদেশে Chinese-inspired innovations-test I scale -আপ করার প্রোগ্রাম।
পানি ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য হ্রাস, জ্বালানি দক্ষতা ইত্যাদি টেকসই অনুশীলনের pilot-projects ।
নীতি ও ক্ষমতা-সংবর্ধনা
জাতীয় পাঠ্যক্রম সংস্কার, অ্যাক্রেডিটেশন ও skill-gap বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পরামর্শ।
সরকারি ও শিল্প নীতি গঠনে benchmarking data I global best practices -এ প্রবেশ
দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতি ও সামাজিক প্রভাব
উচ্চমানের উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন Skilled workforce, value-chain-G Bangladesh -কে এগিয়ে নিতে পারে। শ্রম, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত মান মেনে চলার নিশ্চয়তা exporters -কে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। ইুঁবৎং উচ্চমানের, উদ্ভাবনী supplier ecosystem -কে খুঁজে পেয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
উপরোল্লিখিত বিষয়াবলী আমাদের অর্জিত হলে, অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধি অবশ্যই পরিলক্ষিত হবে।
লেখক : সমাজবিজ্ঞানী; উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম।











