বাংলাদেশে যে বংশগত রোগ নিয়ে শিশুজন্মের হার বাড়ছে তার মধ্যে থ্যালাসেমিয়া অন্যতম। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের হিসেবে প্রতিবছর সাত হাজার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু জন্মগ্রহণ করে। থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে একটি বংশগত রোগ। যারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত থাকে তাদের শরীরে রক্ত উৎপাদন হয় না ফলে রক্তশূন্যতা তৈরি হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে নিয়মিত বিরতিতে রক্ত নিতে হয়।
এই রোগ প্রতিরোধের জন্য বিয়ের আগে যাতে ছেলে-মেয়েরা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের সম্পর্কে জেনে নিতে পারে সেজন্য একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগে। এই প্রকল্পের গবেষক বলছেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থী পরবর্তীতে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়, সেজন্য সম্পর্ক তৈরি হবার আগেই তারা যেন পরস্পরের সম্পর্কে জেনে নেয়। খবর বিবিসিবাংলার।
জাহাঙ্গীরনগর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মোলিকিউলার বায়োলজির শিক্ষক ড. ইব্রাহিম খলিল তার গবেষণার অংশ হিসেবে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্পর্কে জড়ানোর আগে পরস্পরের সম্পর্কে জেনে নেয় তারা থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কি না। কোন ব্যক্তি যদি আগেই জেনে রাখে যে তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না, তাহলে তার মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কিছু নেই বলে উল্লেখ করেন গবেষক ড. ইব্রাহিম খলিল।
তিনি বলছেন, এটা জানা থাকলে সমাজে এই রোগ প্রতিরোধ সহজ হবে। যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক তাদের কোন সমস্যা নেই। অন্য মানুষদের মতোই তাদের জীবন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিয়ে এবং সন্তান নিয়ে। ড. খলিল বলেন, একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক যদি আরেকজন বাহককে বিয়ে করে, তাহলে তাদের যে সন্তানের জন্ম হবে, সেখানে চারজন বাচ্চার মধ্যে একজনের থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন যদি কেরিয়ার হয় এবং আরেকজন যদি না হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই।
থ্যালাসেমিয়ার টেস্ট করানোর কার্যক্রম আগামীকাল রবিবার থেকে শুরু করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অনেকে এরই মধ্যে এই টেস্ট করানোর জন্য আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমি মনে করি সবারই এই টেস্ট করানো উচিত।
গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার অভাব রয়েছে। একেকটি গবেষণায় একেক ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। তবে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে বলে উল্লেখ করেন গবেষক ড. ইব্রাহিম খলিল।
কোন কোন থ্যালাসেমিয়া পেশেন্ট আছে রক্ত নেয়া ছাড়াই ভালো জীবনাচরণের মাধ্যমে সুস্থ আছে। কোন কোন পেশেন্ট আছে যাদের ব্লাড নিতে হয় দুই-তিনমাস পর। কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একমাস পরেই ব্লাড নিতে হয়। অধ্যাপক খলিল বলছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার নিয়ম রয়েছে। এর সাথে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় তিনি থ্যালাসেমিয়া টেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছেন।