শিক্ষার্থী বরণে জোর প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং টিম ।। অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট যথরীতি চালু

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে আগামী সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার এ ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎফুল্ল ভাব বিরাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। র্দীঘ দিন পর শ্রেণি কক্ষের বদ্ধ দুয়ার খুলে চলছে ঝাড়া-মোছা। যেন নতুন করে শিক্ষার্থীদের বরণে জোর প্রস্তুতি। এরই মাঝে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম শেষ করেছে। অল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে কিছু কাজ বাকি থাকলেও তা আজ-কালের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। সবমিলিয়ে দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীদের কোলাহলে ফের মুখর হওয়ার অপেক্ষায় শহর-গ্রামের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ নগরীর বেশ কয়টি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে ক্লাস চালু উপলক্ষে সার্বিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকও করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। এরই মাঝে ক্লাস রুটিন প্রস্তুতসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আমিন ও চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ৫ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে এ মনিটরিং টিম গঠন করার কথা জানিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক ও স্যানিটাইজের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে হাত ধুতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম কলজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম। মোটকথা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাউশির নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস চলবে। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হবে। অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন করে। তবে প্রত্যেক শ্রেণিরই দিনে সর্বোচ্চ দুটি ক্লাস (পিরিয়ড) নেয়া হবে। যার সময়কাল ২ ঘণ্টার বেশি হবে না। অবশ্য প্রাথমিক পর্যায়ের প্রাক-প্রাথমিকের কোনো ক্লাস হবে না।
এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠাতে হবে।
স্কুলের সব ধরণের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে নগরীর চান্দগাঁও এলাকার হাসান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা শারমিন বলেন, শিক্ষার্থীরা না আসলেও শিক্ষকদের নিয়মিত স্কুলে আসতে হয়েছে। যার কারণে প্রতিষ্ঠান মোটামুটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়েছে। এরপরও আমরা পুরো স্কুলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়েছি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসলে আগের মতো কোলাহলমুখর পরিবেশ ফিরে আসবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও ভালো লাগবে।
ক্লাস শুরু হলে এবার একটি শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে দু’ ভাগে বিভক্ত করে দুটি আলাদা কক্ষে ক্লাস নেয়া হবে বলে জানান হাজী মুহাম্মদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আমিন। তিনি বলেন, ৫ম শ্রেণিতে আমাদের ৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আগে এক কক্ষে ৮০ জনকে বসিয়ে ক্লাস নেয়া হতো। তবে এখন আমরা এদের দু ভাগে বিভক্ত করে দুটি আলাদা কক্ষে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একইভাবে প্রত্যেক শ্রেণির ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্ত বলেও জানান প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আমিন।
এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাস রুটিন প্রস্তুত করা হলেও প্রাথমিকের এখনো রুটিন প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি আজাদীকে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে মেরামত কাজ চলছে। যা শনিবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ক্লাস রুটিনের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি গাইডলাইন (নির্দেশনা) দেয়া হবে জানিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, ওই গাইডলাইনে ক্লাস রুটিন তৈরিসহ সার্বিক নির্দেশনা থাকবে। ওই নির্দেশনা মেনেই স্কুলের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আমরা ওই গাইডলাইন পাইনি। জারি হওয়া মাত্র সেটি সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম।
সশরীরে ক্লাস চালু হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম আগের মতো চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর আরিফ এলাহী। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মাউশির পক্ষ থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ওই নির্দেশনা মেনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এর মাঝে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান মাউশির এ আঞ্চলিক পরিচালক।
সব ধরণের প্রস্তুতি শেষে শিক্ষার্থীদের বরণের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে বাকলিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জসিম উদ্দিন খান আজাদীকে বলেন, আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক কিনে রেখেছি। স্যানিটাইজের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রথম দিন একটি করে মাস্ক ও কলম উপহার দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান কলেজ অধ্যক্ষ। তবে গত এক মাস ধরে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম চলমান থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতি বা শঙ্কা অনেকটা কেটে গেছে জানিয়ে প্রফেসর জসিম উদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘ দিন পর সশরীরে ক্লাস চালু হচ্ছে সেটা ঠিক। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার জন্য এর আগে শিক্ষার্থীরা কলেজে যাওয়া-আসা করেছে। এর মাধ্যমে তাদের মানসিক ভীতিটা অনেকটা কেটে গেছে বলে আমরা মনে করছি।
অন্যদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে উৎফুল্ল ভাব ফিরে আসলেও শঙ্কা ভর করেছে অভিভাবকদের একাংশের মনে। এরই মাঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর করোনায় আক্রান্তের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে এ খবরটি নতুন করে চিন্তার ভাজ ফেলেছে অভিভাবকদের কপালে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ
পরবর্তী নিবন্ধচমক ছাড়াই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল ঘোষণা