তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির অংশ হিসেবে গতকাল রোববার চট্টগ্রামেও সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। শিক্ষকদের একটি অংশ ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তারা ক্লাসে যাননি এবং ক্লাস নেননি। অফিসে বসেই তারা কর্মবিরতি পালন করেছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীরা বসে আছে। তবে তাদের ক্লাসে কোনো শিক্ষক ছিলেন না। শিক্ষকদের অফিসে বসে থাকতে দেখা গেছে। অফিসে বসে ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ডাকা দেশব্যাপী কর্মবিরতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছেন বলে জানান তারা।
বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডী হেম পংকজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাকী শীল আজাদীকে বলেন, আমাদের স্কুল খোলা ছিল। তবে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি ছিল কম। আমাদেরকে স্যারেরা (শিক্ষা অফিসার) বলেছেন, সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, তাই ক্লাস নেয়ার জন্য। আমরা ক্লাস নিয়েছি, তবে সব ক্লাস হয়নি। আমার স্কুলের সব শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করা সহকারী শিক্ষকরা ক্লাস নেননি। তারা অফিসে বসে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
আনোয়ারা উপজেলার কুনিরবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ আমরা ৫ জন টিচার রয়েছি। আমরা ৪ জন সহকারী টিচার। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম, কিন্তু ক্লাস নিইনি। কর্মবিরতি পালন করেছি। তিনি জানান, আনোয়ারা উপজেলায় ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সবগুলোতে কর্মবিরতি পালন হয়েছে।
কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমার স্কুলে আমিসহ ১০ জন শিক্ষক। আমি ছাড়া বাকি ৯ জন সহকারী শিক্ষক। সবাই উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তারা ক্লাস নেননি। তারা অফিসে বসে কর্মবিরতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আমিও তাদেরকে জোর করিনি। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে উপস্থিত ছিল।
বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজির আহমদ আজাদীকে বলেন, আমার স্কুলের ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৫ জনই উপস্থিত ছিলেন। আমি আমার স্কুলের সব শিক্ষককে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। আমি ক্লাসে যাচ্ছি, আপনারাও গেলে ভালো হবে। আমি কাউকে জোর করিনি। সকাল সাড়ে ৯টায় পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে গিয়েছি। আমার সাথে সাথে তারাও ক্লাসে গেছেন। অন্য স্কুলে কী হয়েছে জানি না। আমার স্কুলে সব ক্লাস হয়েছে।
উল্লেখ্য, দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শিক্ষকদের একটি অংশ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করা, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান এবং শতভাগ পদন্নোতির দাবিতে আদায়ে ৮ নভেম্বর শাহবাগ ব্লক করতে যান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে রওনা হয়ে শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে সেখানে বাধা দেয় পুলিশ। ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, ছরা গুলি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে আহত হন প্রায় শতাধিক শিক্ষক।
এদিকে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল রাতে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ এ তথ্য জানান।







