বার আউলিয়ার তথা বহু আউলিয়ার আধ্যাত্মিক ফয়েজ বারী বিধৌত এ চট্টগ্রাম। এখানে বহু আউলিয়ার সাধনা নিকেতন হওয়া বিধায়, ইহা পৃথিবীর বিভিন্ন পুণ্যভূমির সহিত ইতিহাসের পাতায় সমমর্যাদায় স্থান পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। চট্টগ্রামের এ গৌরবকে অক্ষুণ্ন এবং অম্লান রাখার মানসে পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর খাস রহমত স্বরূপ এমন একজন যুগশ্রেষ্ঠ মহান ওলীর আবির্ভাব ঘটিয়েছেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর গ্রামের সৈয়দ পাড়া মুনসেফ পরিবারে, তিনি হচ্ছেন– কুতুবে আজম গাউছে মুকাররম হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়দ আব্দুচ্ছালাম ঈছাপূরী (রহ.) এবং তিনি হচ্ছেন আমার পীর–মোরশেদ। আমি ১৯৬৫ সালে প্রথম তাঁর খেদমতে হাজির হই। তবে আমি ইতিপূর্বে সাদা পোশাকধারী রহস্যময় এক বুজুর্গকে স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি মনে মনে তাঁর খোঁজে ছিলাম। একবার আমার এক বন্ধু শাহ আব্দুর রহমান (রহ.) আমাকে বললেন, আমি আপনাকে মাইজভাণ্ডার শরীফের অদূরে একজন বুজুর্গ ওলীর নিকট নিয়ে যাবো। তখন তাঁর সঙ্গে সেই ১৯৬৫ সালে আমি প্রথম বাবাজান আবদুচ্ছালাম ঈছাপূরী (রহ.)’র খেদমতে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করি। আমি তাঁর হুজুরা শরীফে ঢুকেই সালাম আরজ করলাম এবং কদমবুচি করলাম। তবে আমি তাঁকে দেখা মাত্রই আমি যে ইতিপূর্বে স্বপ্নে একজন বুজুর্গকে যে বেশভূষা, সাদা দাঁড়ি, পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখেছিলাম ঠিক একই অবস্থায় তাঁকে দেখতে পেলাম এবং আমি মনে মনে স্থির করে নিলাম– ইনিই আমার স্বপ্নে দেখা সেই বুজুর্গ। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর হুজুর কেবলা বললেন, বাবা! আপনি যে আমার দরবারে আসবেন, আমি দরবার শরীফ থেকে বেশারত পেয়েছি। আপনার দ্বারা আমার দরবারের খেদমত হবে। সেই থেকে হুজুরের দরবারে আসা–যাওয়া। ব্যাংকে চাকরি করতাম। আমি প্রথম ১০০ টাকার বেতনে চাকরি শুরু করি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হুজুরের দরবারে চলে আসতাম। যাওয়ার সময় গাড়ি ভাড়া থাকত। আসার সময় কোনো কোনো সময় গাড়ি ভাড়া থাকতো না। কিন্তু হুজুরকে বলতাম না। তবে হুজুর নিজের থেকেই গাড়ি ভাড়া এবং নাস্তা খরচ সহ দিয়ে দিতেন। এভাবে আসা–যাওয়া চলছিল, এমন কি হুজুরের দরবার ছাড়া আমি অন্য কোথাও যেতাম না।
যুদ্ধের পর দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। তখনও ব্যাংকের চাকরিতে নিয়োজিত আছি। একদিন হুজুরের দরবারে গেলাম, অনেক কথাবার্তার পর হুজুর বললেন, বাবা ব্যবসা করতে পারেন না। বললাম, হুজুর! পারি তো কিন্তু টাকা তো নাই। তখন হুজুর দৃঢ়ভাবে বললেন, টাকা আল্লাহ্ই দিবেন। তাঁর এই কালামের বরকতে ব্যবসা শুরু করেছি। সেই থেকে হুজুরের দোয়ায় আর দয়ায় আজ মহান আল্লাহ্পাক এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছেন। ১০০ টাকার গোলাম আজ মিল–ফ্যাক্টরির মালিক হয়েছি, হাজার হাজার লোকের জীবন–জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে। এ সবই আমার প্রিয় মোর্শেদ বাবাজান কুতুবে আযম গাউছে মুকাররম হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আব্দুচ্ছালাম ঈছাপূরী (রহ.)’র দোয়া এবং দয়ার ফসল। তিনি আমার জীবনকে সাজিয়েছেন। আমি মনে করি আমার শরীরটাই মিজান, আমার ভিতরে বাবা ঈছাপূরী বিরাজ করছেন।
বাবাজান ঈছাপূরী (রহ.) একজন কামেলে মোকাম্মেল ওলী ছিলেন। যিনি নজর করম ও তাওয়াজ্জুহ্ দ্বারা ওলী তৈরি করেন তিনিই মোকাম্মেল ওলী। তার পরও আজ তাঁর বেছাল বার্ষিকী ওরছ শরীফ উদযাপন উপলক্ষে আমার সীমিত জ্ঞানে তাঁর জীবনধারার কিছু বর্ণনা তুলে ধরার প্রয়াস পেলাম।
প্রথমত: তিনি মাইজভাণ্ডারী শরাফতের প্রবক্তা গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়দ আহমদুল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারীর (ক.) বেশারতপ্রাপ্ত ও আশীর্বাদপুষ্ট এবং গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা মাইজভাণ্ডারীর (ক.) অন্যতম প্রধান খলিফা। তাঁর পিতা সৈয়দ সিদ্দিক আহমদ সেরেস্তাদার সাহেব একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পিতামহ হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়দ আমিন উদ্দিন মোনসেফ সাহেব, গাউছুল আজম হযরত কেবলার (ক.) হামজামাতি ছিলেন।
হযরত মাওলানা ঈছাপূরীর (রহ.) পূর্ব পুরুষগণ গৌড় নগর থেকে আগত সৈয়দ হামিদুদ্দীন গৌড়ির বংশধর, যাঁরা বাগদাদ থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য গৌড় নগর হয়ে কালের পরিক্রমায় চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের এক পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ছানার বংশেই এ মহান সাধকের জন্ম।
গাউছে মুকাররম হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়দ আব্দুচ্ছালাম ঈছাপূরী (রহ.) মাতৃগর্ভে থাকতেই তাঁর মাতা সৈয়দা জামিলা খাতুন স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান সাধক সম্পর্কে বেশারত লাভ করেছিলেন। একদিন অন্যান্য দিনের ন্যায় বিবি সৈয়দা জামিলা খাতুন যথারীতি এশার নামাজ, তেলাওয়াত, তছবিহ্–তাহ্লীল দরূদ শরীফ ইত্যাদি সমাপন করে ঘুমিয়ে পড়েছেন। এমন সময় তিনি স্বপ্নযোগে দেখতে পেলেন হযরত গাউছুল আজম শাহে জিলানী (রা.) কে। তিনি হযরত বড় পীর সাহেবকে কোলে নিলেন আর হযরত বড় পীর সাহেব জামিলা খাতুনকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করলেন। নিদ্রা ভঙ্গের পর জামিলা খাতুন তাঁর স্বপ্ন বৃত্তান্ত তাঁর মাকে খুলে বললেন। স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনে জামিলা খাতুনের শ্রদ্ধেয়া মা তাঁর পীর মোর্শেদ মরহুম হযরত মাওলানা মাইজউদ্দিনের (রা.) সাক্ষাতে তাঁকে মেয়ের স্বপ্ন বৃত্তান্ত খুলে বললেন। হযরত মাওলানা মাইজউদ্দিন (রা.) ওই স্বপ্নের তাবির করতে গিয়ে বললেন, ‘আপনার মেয়েটি খুবই ভাগ্যবতী। তিনি এমন একটি পুত্র সন্তান লাভ করবেন, যাঁর জ্ঞানালোকে চতুর্দিক উদ্ভাসিত হবে। আধ্যাত্মিক জগতেও তিনি অতুলনীয় খ্যাতি লাভ করবেন। হযরত বড় পীর সাহেবকে কোলে নেয়ার মানে হল জামিলা খাতুন বড় পীর সাহেব সদৃশ মর্যাদা সম্পন্ন একজন ওলীর মা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবেন।’ অবশেষে নির্ধারিত দিনক্ষণে এ মহাপুরুষ ১২৮৬ বঙ্গাব্দের ২৭ পৌষ, ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি মোতাবেক ১২৯৭ হিজরির ২১ জামাদিউসসানী ধরাপৃষ্ঠে তশরীফ আনেন।
হযরত ঈছাপূরীর (রহ.) বাল্য জীবন তাঁর পরবর্তী মহৎ জীবনের দর্পন স্বরূপ। তাই আমরা তাঁর বাল্য জীবনের উপর একটা নাতিদীর্ঘ আলোচনার প্রয়াস পেতে চাই। বালক ঈছাপূরী (রহ.)’র মাতামহী (নানী) অবসর সময়ে সর্বদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু মো’জেজাপূর্ণ কিচ্ছা কাহিনী বালক ঈছাপূরী (রহ.)’র কাছে বর্ণনা করতেন। নানীর কাছে এ সব মোজেজাপূর্ণ কাহিনী শুনে বালক ঈছাপূরী (রহ.)’র অন্তর নবীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ল। নানী তাঁকে বেশি পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ দিলেন। বালক প্রতিদিন শোবার আগে অসংখ্যবার দরূদ শরীফ পাঠ করতে লাগলেন। প্রায়ই দরূদ শরীফ পড়া অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়তেন। এভাবে কয়েক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো এক মোবারক রাতে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ভাবী নায়েব বালক ঈছাপূরী (রহ.)কে দর্শন দান করলেন। তিনি আদর করে বালকের মাথায় এবং মুখমন্ডলে মোবারক হাত বুলালেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোবারক হাত দিয়ে বালক ঈছাপূরীকে স্পর্শ করার সময় তিনি এমন এক অপূর্ব সুগন্ধি অনুভব করেছিলেন, যা তাঁর পরবর্তী জীবনে নিজ মোর্শেদ গাউছুল আজম হযরত বাবাজান কেবলার (ক.) হুজুরা শরীফে এবং গাউছুল আজম দাদা হযরত সাহেব কেবলা রাহেমা হুল্লাহ্র রওজা শরীফ ছাড়া আর কোথাও পাননি। প্রায়ই এ সুগন্ধি তিনি পেতে লাগলেন। কোনো কোনো সময় তিনি বলে উঠতেন, ‘রাসূলে কারীম (দ.) এসেছেন। আমি সুগন্ধি পাচ্ছি।’ একথা বলে তিনি চিৎকার করে উঠতেন। পিতা সিদ্দিক আহমদ স্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কোনো এক শুক্রবার তাঁদের মসজিদের ইমাম মরহুম মৌলভী হামিদুল্লাহ্ সাহেবের কাছে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হলেন। ছেলের স্বপ্ন বৃত্তান্ত এবং তাঁর মানসিক অবস্থা ইমাম সাহেবকে খুলে বলার পর ইমাম সাহেব বালক ঈছাপূরীকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করে মন্তব্য করলেন যে, সত্যিই বালকটি হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখেছেন। তিনি আরও বললেন, ছেলের স্বপ্ন খুবই মোবারক। তাঁকে যেন এল্মে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, মরহুম আমিনুদ্দিন মোনসেফ সাহেবের পরবর্তী আওলাদের সবাই ইংরেজি শিক্ষার দিকেই খুব বেশি ঝুঁকে পড়েছিলেন। সুতরাং বালক ঈছাপুরী (রহ.)’র পিতা মরহুম সৈয়দ সিদ্দিক আহমদ সেরেস্তাদারও ছেলেকে ইংরেজি শিক্ষা দানের স্বাভাবিক ইচ্ছা পোষণ করলে মাতা জামিলা খাতুন তাতে বাধ সাধলেন। তিনি পীর মাইজউদ্দিন (রা.) এবং ইমাম হামিদুল্লাহ সাহেবের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ করিয়ে ছেলেকে মাদ্রাসায় শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু মরহুম সৈয়দ সিদ্দিক আহ্মদ সেরেস্তাদার সাহেব পার্থিব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ছেলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করলেন এবং তাকে হাটহাজারী স্কুলে ভর্তি করলে বালক মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করতে লাগলেন।
পরবর্তী ঘটনা, একবার তাঁর মা বালক ঈছাপূরীকে কিছু মিষ্টান্ন দিয়ে হযরত আহমদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র খেদমতে পাঠিয়েছিলেন। হযরত কেবলা তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে কালাম করেছিলেন, ‘হাচ্ছান কা চেহারা তুম নে আয়া হ্যায়’ এ কালামের রহস্য কেহই তাঁকে বুঝিয়ে বলতে পারেননি। পরবর্তীতে হযরত ছাহেব কেবলা তাঁকেই স্বপ্নযোগে এভাবে বুঝিয়েছেন, অনাগত ভবিষ্যতে তিনি হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হযরত হাচ্ছান ইবনে সাবিতের (রা.) বিশেষত্ব নিয়ে তাঁর দরবারের খেদমতে নিয়োজিত হবেন।
পরবর্তীতে তিনি বাধ্য হয়ে গাউছুল আজম হযরত মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা মাইজভাণ্ডারীর (ক.) বেশারতের ফলস্বরূপ স্কুল ছাড়েন। অতঃপর তিনি স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হন। অল্প সময়ের মধ্যে আরবী, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় অনেক কিতাব মুখস্থ করেন। এতে স্থানীয় বিশিষ্ট আলেম মাওলানা সৈয়দ আবদুল লতিফ সাহেবের অবদান অনস্বীকার্য। পরবর্তীতে তিনি উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য চট্টগ্রাম শহরের মোহছেনিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত মাওলানা কামাল উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল মাজীদ ও ফখরে বাংলা মাওলানা আব্দুল হামীদের (রহ.) কাছে কুরআন মাজীদ, হাদীস শরীফ ও বিভিন্ন ফিকহ বিষয়ক কিতাবের দরস লাভ করেন। পরে তিনি আরো উচ্চতর ডিগ্রি লাভের আশায় সে সময়কার বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় জামাতে উলার পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি কলিকাতা রামজানিয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফিক্হ শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে ‘মুফতি–এ–আজম’ লকব লাভ করেন। কর্ম জীবনে তিনি প্রথমে হুগলী মোহছেনিয়া মাদ্রাসার মুদাররিস নিযুক্ত হন। সে সময়ে মি. টেইলার নামে একজন ইউরোপীয়ান, শিক্ষা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি হুগলী মাদ্রাসা পরিদর্শনে গিয়ে মাওলানা ঈছাপূরীর (রহ.) আরবী, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষার দক্ষতা দেখে তাঁকে সরকারি হুগলী ইসলামিয়া ইন্টারমেডিয়েট কলেজের আরবী ও ফার্সি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। কিন্তু তিনি চাকরি জীবনে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেননি। প্রায় রাতে তাঁর প্রিয় পীর মুর্শিদ হযরত বাবাজান কেবলাকে (ক.) স্বপ্নে দেখতেন। তিনি তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকতেন। তাই তিনি দেশে ফিরে এসে গাউছুল আজম হযরত বাবাজান কেবলার (ক.) সান্নিধ্যে চলে আসেন। এভাবে গাউছে মুকার্রম হযরত মাওলানা সৈয়দ আব্দুচ্ছালাম ঈছাপূরী (রহ.) ইল্মে যাহির ও ইল্মে বাতিনও অর্জন করেন। এ মহান সাধক একশত চার বছর হায়াতে শরীয়ত, ত্বরিকত ও তাসাউফ বিষয়ে প্রায় একশ চারখানা কিতাব রচনা করে তাঁর জ্ঞানের আলোয় জগতকে আলোকিত করে গেছেন। আরো উল্লেখ্য যে, তিনি বাতেলপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১০৪খানা মোনাজেরার মজলিশ করে হক্ব মাছআলা প্রচার করেছেন। অবশেষে অগণিত ভক্ত মুরীদানকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ১৩৯০ বঙ্গাব্দের ১১ চৈত্র মোতাবেক ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ, ১৪০৪ হিজরির ২১ জমাদিউস সানী মহান আল্লাহ্ তা’আলার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইহজগত ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজেউন)।
আজ সেই মহান ১১ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২৫ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখে তাঁর পবিত্র বার্ষিক ওরছ শরীফ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্থানীয় ও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক ভক্ত–মুরীদানের সমাগম হবে। বিশেষ করে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বড় পীর সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানীর (রহ.) ১৮তম অধঃস্থন বংশধর হযরত শায়খ সৈয়দ আফিফ উদ্দিন আল–মানছুর আল জিলানী মু.জি.আ.। এতে আরো অনেক ওলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানেদ্বীন উপস্থিত থেকে মহান ওলী হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ আব্দুচ্ছালাম ঈছাপূরীর (রহ.) জীবনদর্শন ও কর্মজীবনের উপর তথ্যভিত্তিক আলোচনা করবেন।
লেখক– সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পপতি ও চেয়ারম্যান পিএইচপি পরিবার।