শার্ল বোদলেয়ার (১৮২১–১৮৬৭)। পুরো নাম শার্ল–পিয়ের বোদলেয়ার। ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম কবি ও অনুবাদক। আধুনিক কবিতার জনক বলা হয় তাকে। বোদলেয়ার ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ই এপ্রিল প্যারিসের পারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফ্রাঁসোয়া বোদলেয়ার মা ক্যারোলিন। ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দে শার্লের বয়স যখন ৬ তখন তাঁর পিতা ফ্রাঁসোয়া মারা যান। বোদলেয়ার একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন, সেখানেই টিন–এজ বয়সে বোদলেয়ার কবিতা লেখা শুরু করেন। বোদলেয়ার পরে আইন নিয়ে পড়া শুরু করেন, এবং ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাশ করে বের হন। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে শার্ল ভারতের উদ্দেশ্যে সমুদ্র যাত্রা করেন। ভারতে গিয়ে শার্ল কবিতা লেখায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। বোদলেয়ারের মৃত্যুর চার বছর পর আর্তুর র্যাঁবো লিখেছিলেন, ‘প্রথম দ্রষ্টা তিনি, কবিদের রাজা, এক সত্য দেবতা’। পল ভালেরি বলেছিলেন, ‘বোদলেয়ার ফরাসি সাহিত্যের ওপর সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি, তাঁর কবিতা আধুনিকতার প্রতিভূ।’ বোদলেয়ারের কবিতা আধুনিক কাব্যচর্চায় এতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিলো ইয়েটস, ভের্লেন, মালার্মে, ভালেরি, রিলকে, র্যাঁবো, এলিয়ট, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, সমর সেন, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, রফিক আজাদ, আবুল হাসান, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখের কবিতায় তার ছাপ সুস্পষ্ট। ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বোদলেয়ার। আঁসেলকে লেখা একটি বিদায়পত্রে বোদলেয়ার লিখলেন, ‘আমি আর বেঁচে থাকতে পারছি না বলেই আত্মহত্যা করছি, ঘুমোতে যাবার আর জেগে ওঠার পরিশ্রম অসহ্য হয়ে উঠেছে আমার পক্ষে’। পরে মায়ের কথা ভেবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন। বোদলেয়ার নরকেই বাস করতে চেয়েছিলেন, যদিও রোমান্টিক স্বর্গে তাঁর বিশ্বাস ছিল। রোমান্টিকেরা যেখানে আত্মকরুণা করেন বোদলেয়ার সেখানে করেছিলেন আত্মপরীক্ষা। রোমান্টিকেরা দোষ দেন অন্যদের, বোদলেয়ার দোষ দিয়েছেন নিজেকে। বোদলেয়ার পাপের ভেতর পেয়েছিলেন সৌন্দর্যের বাতিঘর। দুঃখ আর পাপ থেকে নিঙড়ে বের করলেন অভাবিত সুন্দরকে। তিনি ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।