শান্তা দেবী (১৮৯৩–১৯৮৪)। ঔপন্যাসিক ও শিশুসাহিত্যিক। জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে এপ্রিল কলকাতায়। শান্তা দেবীর প্রথম পনেরো বৎসর কাটে এলাহাবাদে। ব্রাহ্মসমাজ–নেতা, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ পিতা রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে উদার স্বাধীনতা এবং ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকার সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়ে বি.এ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ্মাবতী স্বর্ণপদক লাভ করেন। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় এবং অর্থনীতি ও গণিতে বিশেষ পারদর্শিনী ছিলেন। কলেজে পড়ার সময় ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে দুই বোন মিলে শ্রীশচন্দ্র বসুর ঋড়ষশ ঞধষবং ড়ভ ঐরহফঁংঃধহ গ্রন্থটি ‘হিন্দুস্থানী উপকথা’ নামে অনুবাদ করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রায় দুই বছর পিতার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে থাকার সময় তিনি নন্দলাল বসুর কাছে অঙ্কন শিক্ষা করেছেন। দেশে বিদেশে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। দুই বোন মিলে সংযুক্তা দেবী নামে প্রথম উপন্যাস ‘উদ্যানলতা’ রচনা করেন। এটি পরে ঞযব এধৎফবহ ঈৎববঢ়বৎ নামে অনূদিতও হয়েছে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক কালিদাস নাগের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর সঙ্গে তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেন যার অভিজ্ঞতা ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় লিখেছেন। যেমন ‘মহেঞ্জাদড়োর কথা’, ‘জাপানের ডায়েরি’ প্রভৃতি। আমেরিকা প্রবাসে তিনি মিনেসোটার ম্যাকালেস্টর কলেজে বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। তিনি ‘প্রবাসী’র সম্পাদকীয় বিভাগে নানা দায়িত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ‘ভারত–মুক্তিসাধক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও অর্ধ শতাব্দীর বাংলা’ গ্রন্থটির জন্য তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক লাভ করেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল– শিশুসাহিত্য : সাত রাজার ধন (সীতা দেবীর সাথে), হুক্কা হুয়া, কেমন জব্দ। উপন্যাস : স্মৃতির সৌরভ, জীবনদোলা, অলখ ঝোরা, দুহিতা, চিরন্তনী। গল্প ও অন্যান্য রচনা : ঊষসী, সিঁথির সিঁদুর, বধূবরণ, দেওয়ালের আড়াল পঞ্চদর্শী। ভাইয়ের মৃত্যুর পরে তাঁর লেখা ‘শোক ও সান্ত্বনা’ বইটি মৃত্যুচিন্তার এক অসাধারণ দলিল। ‘পূর্বস্মৃতি’ নামে এক স্মৃতিমূলক রচনা করেছেন। তাঁর ও সীতা দেবীর অনেক গল্প ইংরেজিতে সীতা দেবী অনুবাদ করেন। সেই গল্পগুলি টেলস অব বেঙ্গল নামে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে মে মৃত্যুবরণ করেন।