শান্ত-মুশফিকের সেঞ্চুরিতে চালকের আসনে বাংলাদেশ

গল টেস্টের প্রথম দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ১৮ জুন, ২০২৫ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

টেস্ট ক্রিকেটে পোশাকের রং যতটা না উজ্বল বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ততটাই বিবর্ণ। ক্রিকেটের বনেদি এই ফরমেটে বাংলাদেশ সবশেষ নিজেদের মাঠে জিম্বাবুয়ের কাছেও হেরেছে। তার উপর ক্রিকেটাররা রয়েছেন বাজে ফর্মে। সবমিলিয়ে গতকাল মঙ্গলবার স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ যখন মাঠে নামছিল; তখন যেন চারদিক থেকেই চাপের মুখে ছিল শান্তলিটনমুশফিকমোমিনুলরা। এদিকে গত এক বছরে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা পারফরমার মেহেদী হাসান মিরাজের খেলাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে জ্বরের কারণে। তাই মাঠে নামার আগে মাঠের বাইরের চাপটা যেন আরো বেশি ভারী হয়ে উঠছিল বাংলাদেশের। গল টেস্টের শুরুটা একেবারেই বিবর্ণ শুরু করেছিল টাইগাররা। কিন্তু সমালোচনার তীরে যে দুইজন সবচাইতে বেশি বিদ্ধ হচ্ছিল সেই নাজমুল হোসেন শান্ত এবং দলের সবচাইতে সিনিয়র সদস্য মুশফিকুর রহিম দাঁড়িয়ে গেলেন বুক চিতিয়ে। দুইজনের নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে টেস্টের প্রথম দিনটা পার করেছে উজ্জ্বলভাবে। শান্ত এবং মুশফিকের শতকের উপর ভর করে বাংলাদেশ দল টেস্টের প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে। ৩ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।

অথচ শুরুটা কতই না বিবর্ণ ছিল। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই ফিরেন এনামুল হক বিজয়। রানের খাতা খুলতে পারেননি মিরাজের পরিবর্তে দলে জায়গা পাওয়া এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে সাদমান ইসলাম এবং অভিজ্ঞ মোমিনুল হক দলকে টেনে নিয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তারাও ব্যর্থ হলেন। ৩৮ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ৫৩ বলে ১৪ রান করা সাদমানকে ফেরান রত্নায়েকে। মোমিনুলও পারেননি দলকে টানতে। নিজের ব্যক্তিগত ২১ রানের মাথায় তারিন্দু রত্নায়েকের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন মোমিনুল। তবে সেটা নিতে পারেননি ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ঠিক একই কায়দায় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মোমিনুল। এবারেও বোলার সেই রত্নায়েকে, আর ফিল্ডার সেই ধনঞ্জয়া। এবারে তিনি মিস করেননি। মোমিনুল ফিরলেন ২৯ রান করে। ৪৫ রানে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের। সেই পুরানো চেহারাই যেন ভেসে উঠছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। কিন্তু লড়াইটা করার যে পণ করেই নেমেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। চাপ সামলে চতুর্থ উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়েন তারা। দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। লড়েছেন দিনের শেষ বল পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনেও ব্যাট করতে নামবেন শান্ত ও মুশফিক।

গল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা যদিও একদমই ভালো হয়নি। তবে বাকি সময়টা পুরোটাই বাংলাদেশের। ৩ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে তারা। মুশফিক অপরাজিত আছেন ১৩৬ রানে। আর শান্ত আছেন ১০৫ রানে।

দিনের প্রথম সেশনে ৩ উইকেট হারিয়ে ৯০ রান করে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় সেশন থেকে কোনো ক্ষতি ছাড়াই শুরু করেন শান্ত ও মুশফিক। দুজনেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তাও একই ওভারে। ৪৮তম ওভারে প্রবাথ জয়সুরিয়ার করা দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নেন শান্ত। সেই সঙ্গে মুশফিকের সঙ্গে তার জুটিতে ১০০ রান পূর্ণ হয়। পরের বলে ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটির দেখা পান মুশফিকও। ১৩ ইনিংস পর ফিফটির দেখা পেলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।

তৃতীয় সেশনে খেলতে নেমে ২৬৬ বলে নিজেদের প্রথম শতরানের জুটিকে দেড়শ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। এর পরপরই বাংলাদেশের দলীয় রান দুইশ পার হয় তাদের ব্যাটে। ধীরে ধীরে রান বাড়তেই থাকে। এরই মধ্যে লম্বা সময় পর সেঞ্চুরির দেখা পান নাজমুল হাসান শান্ত। ২০২ বলে ১১ চার ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক তুলে নেন তিনি। তাও দেড় বছর আর ২১ ইনিংস পর। এরপর শান্তর পথেই হাঁটতে থাকেন মুশফিক। সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনিও। ১৭৬ বলে ৫ চারে শতক পূর্ণ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। প্রায় দশ মাস পর শতকের দেখা পান তিনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার। তার শতকের কিছুক্ষণ পরই প্রথম দিনের খেলা শেষ হয়। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিটা হয়ে গেছে ২৪৭ রানের। চতুর্থ উইকেটে যা লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা। যদিও সেটিকে আরো এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এই দুজনের সামনে। একই সাথে বাংলাদেশের ইনিংসটাকেও আরো বড় করার সুযোগ এই দুই সেঞ্চুরিয়ানের সামনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযৌতুকের জন্য নির্যাতন, কালুরঘাট সেতু থেকে নদীতে নারীর ঝাঁপ
পরবর্তী নিবন্ধমোসাদের সদরদপ্তরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের হানা