দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ বেশি ভোট প্রদান করেছেন। গতকাল চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে গ্রামের ১০টি আসনে গড়ে ৪২.৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। গ্রামের আসনগুলোর কোনো কোনোটিতে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। নগরীতে এই হার ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি। নগরীর কোনো কোনো আসনে ২০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটারের উপস্থিতি ছিল। নগরে গড়ে ভোটার উপস্থিতি ২৬.৭১ শতাংশ।
টানা তিন দিনের ছুটি এবং ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের চেষ্টা গ্রামে ভোটের হার বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম–১ মীরসরাই আসনে ১০৬টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৫ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১৮ ভোট কাস্ট হয়েছে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৩৬.৮১ শতাংশ ভোটার। চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসনে ১৪২টি ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোট প্রদানের হার ২৮.৬১ শতাংশ। চট্টগ্রাম–৩ সন্দ্বীপে ৮৪টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯১৪ জন ভোটারের মধ্যে ৮৪ হাজার ৬৭০ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোটার উপস্থিতির হার ৩৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম–৬ রাউজানে ৯৫টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯২০ জন ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ৩২ হাজার ৩০৩ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোটার উপস্থিতির হার ৭৩.৩০ শতাংশ। চট্টগ্রাম–৭ রাঙ্গুনিয়ায় ১০৩টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯১ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার ২০১ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটার উপস্থিতির হার ৫৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম–১২ পটিয়ায় ১০৮টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪২৮ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৯ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোট প্রদান করা হয়েছে ৫০.৪৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম–১৩ আনোয়ারা–কর্ণফুলী আসনে ১১৮টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৪ জন ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ৪ হাজার ৬২৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এই আসনে ৫৬.১২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে ১০০টি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৩ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৮৬ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই আসনে ভোটার উপস্থিতির হার ৪৬.৫৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম ১৫ (সাতকানিয়া আংশিক–লোহাগাড়া) আসনের ১৫৭টি ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪১১ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৩৩ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোটার উপস্থিতির হার ২৪.৭৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম–১৬ বাঁশখালী আসনে ১১৪টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৫ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৫৬ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই আসনে ভোটার উপস্থিতির হার ৩৩ শতাংশ।
চট্টগ্রামের উপরোক্ত ১০টি আসনে মোট ১১২৭টি ভোটকেন্দ্রে ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৮ জন ভোটারের মধ্যে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮০ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। চট্টগ্রামের গ্রামে থাকা ১০টি আসনে ভোটার উপস্থিতির গড় হার ৪২.৭০ শতাংশ বলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবং ১০ আসনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনের দিনসহ মোট টানা তিন দিনের সরকারি ছুটি গতকাল শেষ হয়েছে। টানা ছুটি থাকায় শহরে বসবাসকারী অনেক মানুষ গ্রামে গিয়ে ভোট প্রদান করার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া গতকাল দিনভর বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দিয়ে ভোটকেন্দ্রে লোকসমাগম বাড়িয়েছেন। এর ফলে শহরের তুলনায় গ্রামে ভোটার উপস্থিতি বেশি ছিল।
শহর ও গ্রামের সমন্বয়ে ৩টি আসন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড–পাহাড়তলী আকবরশাহ আংশিক) আসনে ১২৪টি কেন্দ্রে ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৭২ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৮ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই আসনে ভোটারের উপস্থিতি ৩৭.২১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী আসনে ১৪৬টি ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ জন ভোটারের মধ্যে ৯৮ হাজার ১০৭ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই আসনে ২০.৬২ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৮ (চান্দগাঁও–বোয়ালখালী) আসনে ১৮৪টি ভোটকেন্দ্রে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৩ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪২ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এই আসনে ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা ২৬.৩০ শতাংশ।
পুরোপুরি শহুরে আসন নগরীর চট্টগ্রাম–৯ কোতোয়ালী আসনে ১৪২টি ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৯ হাজার ৫৭৬ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটার উপস্থিতির হার ৩৪.৪০ শতাংশ। চট্টগ্রাম–১০ ডবলমুরিং আসনে ১৪৮টি ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৩ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ১৩৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এই আসনে ভোটার উপস্থিতির হার ২১.৬৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ১১ বন্দর–পতেঙ্গা আসনে ১৫২টি ভোটকেন্দ্রে ৫ লাখ ১ হাজার ৮৫২ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৬২৯ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটার উপস্থিতির হার ২০.১০ শতাংশ।