চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) শহরে নতুন করে গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য সাতটি স্থান চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো : সাগরিকা মোড়, আগ্রাবাদ এঙেস রোড, প্রবর্তক মোড়, অলংকার মোড়, মাদারবাড়ী শুভপুর বাস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। চিহ্নিত স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণে বেসরকারি বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘শহরে নতুন করে সাত স্থানে হবে গণশৌচাগার’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, নগরে প্রতি এক লাখ ৭৬ হাজার ৪৭০ জন বাসিন্দার জন্য গড়ে মাত্র একটি গণশৌচাগার রয়েছে! আবার বিদ্যমান গণশৌচাগারগুলোর বেশিরভাগই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কোনো কোনোটিতে মহিলাদের জন্য ব্যবস্থা থাকলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই বলে অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে গণশৌচাগার স্থাপন উচিত বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ।
অভিযোগে প্রকাশ, পাবলিক টয়লেটের ভেতরে প্রবেশের আগেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের কারণে অনেকেই প্রবেশ করেন না। টয়লেটগুলোর পয়:নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় এর আশপাশেই মলমূত্র ও ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। অস্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের কারণে অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও প্রবেশ করছেন না পাবলিক টয়লেটগুলোতে। যারা যাচ্ছেন, তারাও নাকে রুমাল চেপে অথবা নাক ধরে প্রবেশ করছেন। নোংরা পরিবেশের জন্য নিম্নশ্রেণীর লোকজনকেই পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে লোকসমাগম হয়, সে জায়গাতেই পর্যাপ্ত শৌচাগার থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি বাস স্টপেজে আট-দশটি শৌচালয় থাকা দরকার। এ ছাড়া পার্ক, রেলস্টেশন, প্রেক্ষাগৃহের সামনে অর্থাৎ যেখানে লোকজনের যাতায়াত আছে, সেখানেই পর্যাপ্ত ব্যবহারোপযোগী শৌচাগার থাকা দরকার বলে তাঁরা মনে করেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর গণশৌচাগার নির্মাণে বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর’কে প্রস্তাবও দিয়েছিল চসিক। এতে বলা হয়েছিল, ‘শহরে প্রতিদিন সন্নিহিত উপজেলা ও দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ চিকিৎসা, ব্যবসা, অফিস-আদালতের জরুরি কাজ ও অন্যান্য প্রয়োজনে আগমন করে থাকে। এ সকল অস্থায়ীভাবে অবস্থানকারীদের জন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শৌচকার্য সম্পাদন নিশ্চিতে জোন ভিত্তিক আরো বেশি পরিমাণে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা প্রয়োজন।
নানা সমস্যায় পরিপূর্ণ আমাদের নগরজীবনের অবস্থা ক্রমেই ভালো হওয়ার বদলে আরো খারাপ হচ্ছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বদলে বাড়ছে নানা দুর্ভোগ আর যন্ত্রণা। বঞ্চনা আর অনিয়মের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে অধিকাংশ নগরবাসীকে। বাংলাদেশের নগর মহানগরগুলো অপরিকল্পিত, অপরিচ্ছন্ন ও নানা অনিয়মে পরিপূর্ণ। গণপরিবহনের বেহাল দশা, অপরিকল্পিত, অপরিচ্ছন্ন ও নানা অনিয়মে পরিপূর্ণ। আস্তে আস্তে শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে নগরবাসীর দিনরাত পার হচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নগরজীবনে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণশৌচাগারের অভাব। এ সমস্যাটি নাগরিকদের প্রতিদিনই চরম অস্বস্তিতে ফেলছে। জনসংখ্যার দিক থেকে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের স্থান। শহরটি এই সময়ে দ্রুত বিকাশিত হচ্ছে। চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানাবিধ প্রয়োজনে নগরীতে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক বাসা থেকে বের হয়। অধিকাংশ মানুষেরই মলমূত্র ত্যাগের জন্য শৌচাগার প্রয়োজন। কিন্তু এখানে চাহিদার তুলনায় শৌচাগারের সংখ্যা খুবই কম। যেগুলো রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ। অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগী। ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ গণশৌচাগার ব্যবহারের কথা চিন্তা করতে পারেন না। ফলে মানুষ বেশি সময় ধরে প্রস্রাব, পায়খানা আটকে রেখে কিডনিজনিত রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নারী, প্রতিবন্ধীদের শৌচাগার ব্যবহারে আলাদা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। যে কারণে শহরে অধিকাংশ নারী কম পানি পান করেন। ফলে তারা পানি স্বল্পতাজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এ ছাড়া গরিব মানুষ, বিশেষ করে বস্তিবাসী, হকার, রিকশাচালক, ভিক্ষুক ও ভাসমান মানুষ- যারা বেশিরভাগ সময় বাইরে অবস্থান করেন, এই নগরীতে তাদের শৌচাগার ব্যবহারের কোনো ব্যবস্থাই নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ফুটপাতের পাশে, পার্কে, লেকে, সড়কের পাশে বিভিন্ন উন্মুক্ত জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করছেন। এতে একদিকে শহরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। শহরের যে কয়েকটি জায়গায় গণশৌচাগার রয়েছে, সেগুলোকে ব্যবহার-উপযোগী করতে হবে। যে সাতটি স্থানে নতুন করে গণশৌচাগার নির্মাণ করার চিন্তা-ভাবনা চলছে, তার অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।