করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর প্রবাসী দেশে ফিরে আসেন। এসব প্রবাসীর জন্য গত এপ্রিলে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু কঠিন শর্তের বেড়াজালে পড়ে একজন প্রবাসীও ঋণ পাননি। এমনকি আবেদনও করতে পেরেছেন যৎসামান্য। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ প্রদানে কিছু শর্ত শিথিল করায় আবেদনের পরিমাণ বেড়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, আগের নীতিমালা অনুযায়ী চলতি বছরের ১ মার্চের পর যারা দেশে ফিরেছেন তারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু নতুন সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে যারা দেশে ফিরেছেন তারাও ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও বাতিল করা হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামে গত দুই সপ্তাহে ৫০টির মতো ঋণ আবেদন জমা পড়েছে। অথচ আগের দুই মাসে আবেদন জমা পড়ে মাত্র দুটি।
জানা গেছে, আগের নীতিমালার ৪(ঘ) শর্তাবলিতে বলা হয়েছিল, ঋণের আবেদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মী প্রমাণে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। তাতে অনেক আবেদনকারী নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মী প্রমাণ করতে পারছিলেন না। কারণ দেশে ফেরত আসাদের কেউ চাকরি হারানোর সনদ দেখাতে পারেননি। তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের জারি করা সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশ গমন ও দেশে ফেরতের পাসপোর্টের ফটোকপি অথবা বিএমআইটির স্মার্টকার্ড সনদ অথবা বিদেশে চাকরির চুক্তিপত্র দিয়ে ঋণের আবেদন করা যাবে।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশে ফেরা এবং বিদেশে মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারের জন্য সরকার গত এপ্রিলে ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। ৪ শতাংশ সুদে বিদেশফেরতদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে ১৩ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। সমঝোতা অনুযায়ী ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ পাওয়ার কথা। ১৫ জুলাই থেকে ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও আড়াই মাসে একজনও ঋণ পাননি। এর মধ্যে ১৭ আগস্ট চট্টগ্রাম বিএমইটির উপপরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার সংস্থাটির মহাপরিচালক বরাবরে চিঠি লিখেন। চিঠিতে তিনি নীতিমালা সংশোধন করার অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, নীতিমালা সংশোধন করতে আমার দপ্তরকে অনুরোধ করেছি। কারণ, ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও দেখা গেছে, একজনও ঋণ পায়নি। সংশোধনী আনায় এখন অনেক বিদেশফেরত কর্মী ঋণের জন্য আবেদন করতে পারছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক সুমন কান্তি দেব আজাদীকে বলেন, ঋণের শর্ত শিথিল করায় এখন আবেদন বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখা, হাটহাজারী শাখা, রাউজান শাখা এবং সন্দ্বীপ শাখা মিলে ৫০টির মতো আবেদন জমা পড়েছে। সেইসব আবেদন যাচাই–বাছাই করে ঋণ বিতরণ করা হবে।