শরতে বর্ষার বৃষ্টি পতেঙ্গার সবজি চাষিদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। সাথে তীব্র গরমসহ প্রকৃতির খামখেয়ালীতে দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হালিশহরের সাগর পাড়ের সবজি চাষিদের। প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। চারার অবস্থাও ভালো ছিল। কিন্তু আচমকা বৃষ্টিতে ক্ষেতে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় প্রচুর চারাগাছ মরে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সাথে ফলনের ব্যাপারে প্রকাশ করা হয়েছে শঙ্কা। অনেক কষ্টে বড় করা চারাগাছগুলোকে টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তীব্র গরমে প্রকৃতিতে বিন্দুমাত্র শীতের আবহ না থাকায় আগাম ফলনের জন্য চাষ করা টমেটো ক্ষেতের ফলন নিয়ে শংকিত কৃষকেরা।
সরজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বেশ কয়েকবছর ধরে নগরীর পতেঙ্গার আনন্দবাজারের পশ্চিম পাশে এবং ধুমপাড়া এলাকায় সাগরপাড়ে কয়েকশ’ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির পাশাপাশি বেশ কিছু জমিতে ধানেরও চাষ করা হয়েছে। বিষমুক্ত ফলন ফলিয়ে পতেঙ্গা এলাকার চাষিরা গত কয়েক বছর ধরে সবজি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। প্রতিবছর এখান থেকে কোটি কোটি টাকার সবজি উৎপাদিত এবং বাজারে বিক্রি করা হয়।
পতেঙ্গা উপকূলের চাষিদের বিশেষত্ব হচ্ছে তারা বিষমুক্ত অর্গানিক পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করেন। উর্বর মাটি, অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশসহ বিভিন্নমুখী সুবিধার কারণে সাগর পাড়ে কোটি কোটি টাকার টমেটোর ফলন হয় প্রতিবছর। আগামি চাষের ফলে মৌসুম শুরুর বেশ আগেই এখানের টমেটো বাজারে আসতে শুরু করে। শত শত টন টমেটো উৎপাদিত হয় এই অঞ্চল থেকে। আগাম টমেটোর বিস্তর চাহিদা থাকে বাজারে। টাটকা টমেটো বিক্রি করে কৃষকদের চোখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ক্ষেতের পাড়ে একশ’ টাকারও বেশি দামে প্রতি কেজি টমেটো পাইকারিতে বিক্রি হয় পতেঙ্গা অঞ্চলে। তবে এবারের পরিস্থিতি নিয়ে কৃষকেরা বেশ শঙ্কিত। ইতোমধ্যে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
এবারও শত শত একর জমিতে টমেটো লাগানো হয়েছে। গাছও বড় হয়েছে। কিন্তু অকাল বর্ষণ, তীব্র গরমসহ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় ক্ষেতে ফলন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। টমেটো শীতকালীন সবজি। প্রকৃতিতে শীতের আবহ না আসলে টমেটো গাছে ফলন হবে না। কিন্তু এবার এত বেশি গরম পড়ছে যে, শীতের আবহ ঠিক কবে দেখা দেবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। এর উপর সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে বৃষ্টি। শরতে বর্ষার বৃষ্টি ক্ষেতে প্রচুর পানি জমে গেছে। এই পানি গাছের গোড়ায় জমে সংকট তৈরি করছে। রাতে দিনে পানি সেচে বাইরে ফেলে দিয়েও চারাগাছ রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠছে। গাছের গোড়ার মাটি প্রচুর পানি শুষে নিয়েছে।
গতকাল কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এবার সবজি চাষে সংকট অনেক। এর মধ্যে টিএসপি সারের ভেজাল অনেক বড় ক্ষতি করেছে। বাজার থেকে কেনা টিএসপি সারে ভেজাল দেয়ায় তা ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্থানীয় কৃষক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মহসীন মিয়া গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, এবার প্রকৃতি বেশ খামখেয়ালী করছে। টমেটোর জন্য শীতের আবহ অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিন্তু এবার দীর্ঘসময় ধরে বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রকৃতির উঞ্চতা অনেক বেশি। টমেটো উৎপাদনে বড় ধরনের ধ্বস তৈরি হওয়ারও শংকা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, কিছু কিছু জমিতে ফুল আসতে শুরু করেছে। প্রকৃতি ঠিকঠাক মতো আচরণ না করলে এই ফুল টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
একটি চারা ঠিকঠাকভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য কঞ্চি বাঁধা থেকে শুরু করে সার এবং সেচ দেয়াসহ নানা খাতে ৫০ টাকারও বেশি খরচ হয়। একটি গাছ থেকে ৫/৭ কেজির বেশি টমেটো পাওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণ করলে ফলন ঠিকঠাকভাবে পাওয়া যাবে না।
মইনুল হাসান নামে অপর একজন খামারী জানান, আগাম টমেটো ফলনের জন্য এক লাখেরও বেশি চারা লাগানো হয়েছে। কিন্তু আচমকা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ক্ষেতের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠেছে। গাছের গোড়ায় পানি জমে যাওয়ায় গাছ মরে যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
শুধু মোহাম্মদ মহসীনই নন, পতেঙ্গার হালিশহর এলাকার আরো কয়েকজন কৃষকও একইভাবে নিজেদের আশংকার কথা প্রকাশ করেছেন। অপর একজন কৃষক ওয়াসার ভূমি নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, জমির ধান গাছ বড় হয়েছে। থোড়ও এসেছে। এখন ওয়াসা জমিতে মাটি ভরাট করার তোড়জোড় শুরু করেছে। আমাদের ধানগুলো বুলডোজার দিয়ে ধংস করে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছে। ওয়াসার একটি প্রকল্পের জমি বর্গা নিয়ে তারা চাষাবাদ করেছে বলেও জানায়।