‘শফি হত্যা মামলা’ ষড়যন্ত্রমূলক নয়

হেফাজতের সংবাদ সম্মেলনে মঈন উদ্দিন।। দোষী হলে বাবুনগরীর শাস্তি দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ নয় বলে দাবি করেছেন বাদী মো. মঈন উদ্দিন। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেন তিনি। এসময় দোষী হলে হেফাজতের আমীর জুনাইদ বাবুনগরীর ‘শাস্তি ও ফাঁসি’ দাবি করেন তিনি।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দের আদালতে মামলা দায়ের করেন শফির শ্যালক মো. মইন উদ্দিন। এরপর গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী মামলাটি ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে দাবি করেন।
এদিকে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. মঈন উদ্দিন বলেন, শফি হুজুরকে হত্যা করার পর আমরা যাতে সত্য কথা বলতে না পারি, সেজন্য আজ অব্দি আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে একের পর এক হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পরিবার থেকে আমি বাদী হয়ে কোর্টে মামলা করেছি। তদন্তে দোষীরা চিহ্নিত হবে। কিন্তু জুনাইদ বাবুনগরী, মামুনুল হক গংরা একের পর এক হুমকি দিচ্ছে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য।
আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা থাকলেও ‘নিরাপত্তা হুমকির’ কারণে তিনি আসতে পারেননি বলে দাবি করেন মো. মঈন উদ্দীন।
জুনাইদ বাবুনগরী সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুনাইদ বাবুনগরী যদি অপরাধী না হয়ে থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যক্তিগত রাগ, বিরাগ নেই। তবে যদি অপরাধী হয়ে থাকেন এবং তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, তবে তার শাস্তি ও ফাঁসি দাবি করছি। তারা যদি দোষী না হয়ে থাকেন তদন্তে তা প্রমাণ হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সুপরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানের দোসর জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা হত্যা করেছে। বাবুনগরীর মত একজন বয়োবৃদ্ধ আলেম সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল।
মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কি ঘটেছিল তা আপনারা সবাই জানেন। ‘কওমী ভিশন’ এর মাধ্যমে জুনাইদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদরাসায় অবস্থান করে সকল ঘটনা লাইভ প্রচার করেছেন। আপনারা দেখেছেন, কিভাবে শফী হুজুরের রুম ভাঙচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে। হত্যার জন্য বারবার হুমকি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, মামলাটির যাতে দ্রুত বিচার হয়। তদন্ত যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, অন্যায়কারীরা যাতে চিহ্নিত হয়, চিহ্নিত অন্যায়কারীদের যাতে যথাযথ শাস্তি বাস্তবায়ন হয়।
গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারীর মাদরাসায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে বলা হয়, জানতে পেরেছি, মাদরাসার অনেক নিরীহ শিক্ষক ও ছাত্রদের জুনাইদ বাবুনগরী ব্যক্তিগতভাবে উস্কানি দিচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাটহাজারী মাদরাসাকে ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুনাইদ বাবুনগরী ও তার দোসররা আমার ভাগিনাকে হত্যা করবে বলে তার তিন ছেলেকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সাজানো বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছে। ইতিমধ্যে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমার ভাগিনা কোন পরিবেশে বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়েছিল তা জানিয়েছে।
তিনি বলেন, আনাস জানাজায় আসলে একসাথে দুটো জানাজা হবে বলেছিল জুনাইদ বাবুনগরী। মামুনুল হক বাহিনী ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় আমার সামনে ভাগিনা আনাস মাদানীর ওপর হামলা চালায়। অনেক কষ্টে আমি তাকে রক্ষা করি। জানাজায় ইউসুফ বক্তব্য রাখলেও জুনাইদ বাবুনগরীর দোসররা তার বক্তব্য সীমিত ও নির্ধারিত করে দিয়েছিল। ফলে আমার ভাগিনা তার পরিবারের অন্তরে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো সেদিন বলতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, হুজুরের পরিবারের কেউ রাজনীতি করেন না। মামলার বাদীও রাজনীতি করেন না। এটা হত্যা মামলা। সমস্ত দুনিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছে কিভাবে মাদরাসায় হুজুরের কক্ষে হামলা হয়েছে। যেটা সবাই দেখেছে, তা ঘটেনি বলে তারা দাবি করছে। হুজুরের পরিবার, তারা দুই ছেলে এবং নাতিদেরও বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মাদরাসায় শিক্ষকরা বড় হুজুরকে করা সেই জুলুমে অংশ নেননি। কিছু সংখ্যক বহিরাগত এসব করেছিল। হাটহাজারী মাদরাসাকে এসবে জড়ানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে। সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা শামসুদ্দিন আফতাব, মাওলানা সারওয়ার আলম, মাওলানা ওজায়ের উল্লাহ, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা ক্বারী তৌহিদুল আলম, মাওলানা ওসমান উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধা ও গুণীজন সংবর্ধনা
পরবর্তী নিবন্ধশ্রমিক কল্যাণ তহবিলে পাঁচ কোটি টাকা দিল মেঘনা পেট্রোলিয়াম