শততম টেস্ট শতরানে রাঙানোর অপেক্ষায় মুশফিক

১ম দিন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯২ রান

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশআয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি এমনিতেই হয়ে উঠেছে মুশফিকের ম্যাচ। তার শততম টেস্ট ঘিরে রোমাঞ্চের জোয়ার বইছে কদিন ধরেই। টেস্ট শুরুর আগেও সকালে মুশফিককে ঘিরে ছিল নানা আয়োজন। এমন দিনে ব্যাট হাতেও সেঞ্চুরিটা পেলে প্রাপ্তির পূর্ণতায় টইটম্বুর হতো তা। কিন্তু দিন শেষে অপরাজিত তিনি ৯৯ রানে।

ইনিংসের শুরু থেকেই এ দিন মুশফিক ছিলেন বেশ সতর্ক। আয়ারল্যান্ডের বোলিং এমনিতেই ধারহীন। তিনি কোনো ঝুঁকির পথও বেছে নেননি। ঠাণ্ডা মাথায় সোজা ব্যাটে খেলে গড়েছেন ইনিংস। প্রিয় স্লগ সুইপ বা রিভার্স কিংবা স্কুপ খেলেননি বললেই চলে। ১৮৭ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি মেরেছেন স্রেফ পাঁচটি। দ্বিতীয় দিন সকালে আর এক রান করতে পারলেই শততম টেস্টে শতরান করা একাদশ ক্রিকেটার হবেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক।

গতকাল বুধবার প্রথম দিনের শেষ বেলায় ছিল তুমুল উত্তেজনা। যেন নাটকীয় কোনো ম্যাচের শেষ কয়েকটি মুহূর্ত। দিনের খেলার যখন দুই বল বাকি, সেঞ্চুরি ছুঁতেও তখন দুই রান প্রয়োজন মুশফিকুর রহিমের। পঞ্চম বলে প্রিয় সুইপ শট খেললেন তিনি, টাইমিংও হলো দারুণ। গ্যালারি থেকেও ভেসে এলো উল্লাস। কিন্তু বল গেল স্কয়ার লেগে একদম ফিল্ডারে সোজাসুজি। রান হলো কেবল একটিই। শেষ ডেলিভারিতে স্ট্রাইক হলো না তার।

খানিকটা নাটকীয়তার জন্ম হলো ওভার শেষেও। সময় শেষ নাকি আরেকটি ওভার চালিয়ে নেওয়া যাবে, সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নিলেন আম্পায়াররা। রুদ্ধশ্বাস কয়েকটি মুহূর্ত শেষে আম্পায়ার তুলে নিলেন বেলস। গোটা বিকেলে একটু একটু করে জমে ওঠা রোমাঞ্চ পেল না শেষের পরিণতি। অপেক্ষা পরদিন সকালের। শততম টেস্টের প্রথম দিনটি মুশফিক শেষ করলেন ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ২৯২। মুশফিক ছাড়াও বাংলাদেশের হয়ে প্রথম দিন হাফসেঞ্চুরি করেন বাঁহাতি ব্যাটার মুমিনুল হক। ৬৩ রানে আউট হন তিনি।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে উদ্বোধনী জুটিতে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। ১৪তম ওভারে দলের রান হাফসেঞ্চুরিতে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে রিভিউর সহায়তা নিয়ে সাদমানকে লেগ বিফোর আউট করেন আয়ারল্যান্ড স্পিনার এন্ডি ম্যাকব্রিন। ৬টি চারে সাদমান ৪৪ বলে ৩৫ রান করেন। সতীর্থকে হারানোর পর মুমিনুল হককে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন জয়। জুটিতে ৩১ রান যোগ হবার পর ম্যাকব্রিনের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন জয়। ৮৬ বল খেলে ২টি বাউন্ডারিতে ৩৪ রান করেন প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৭১ রান করা জয়।

৮৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনার ফেরার পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ১টি ছক্কায় ৮ রানে ম্যাকব্রিনের তৃতীয় শিকার হন শান্ত। ৯৫ রানে ৩ উইকেট পতনের পর জুটি বেঁধে প্রথম সেশন শেষ করেন মুমিনুল ও মুশফিক। ৩১ ওভারে ৩ উইকেটে ১০০ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ম্যাকব্রিনের বলে চেড কারমাইকেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান মুমিনুল। তখন ২৩ রানে ক্রিজে ছিলেন তিনি। মুমিনুলের পর ক্যাচ দিয়ে জীবন পান ২২ রানে থাকা মুশফিকও। আয়ারল্যান্ডের অভিষিক্ত স্পিনার গ্যাভিন হোয়ের বলে উইকেটরক্ষক লরকান টাকার ক্যাচ ফেলেন মুশির। এরপর আয়ারল্যান্ড বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মুমিনুলমুশফিক।

৯৩ বল খেলে টেস্টে ২৪তম হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুমিনুল। চাবিরতির পর ইনিংসের ৬৩তম ওভারে হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশফিক। ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি করতে ১০৯ বল খেলেন তিনি। ঐ ওভারেই ২০০ স্পর্শ করে বাংলাদেশের রান। মুশফিকের অর্ধশতক পাবার পরের ওভারেই আউট হন মুমিনুল। ম্যাকব্রিনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল পায়ে লেগে ক্যাচ উঠে। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ নেন এন্ডি বলবির্নি। ১টি বাউন্ডারিতে ১২৮ বল খেলে ৬৩ রান করেন মুমিনুল। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সাথে ২১৪ বলে ১০৭ রান যোগ করেন মুমিনুল।

দলীয় ২০২ রানে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে মুমিনুল ফেরার পর ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শততম ম্যাচ খেলতে নামা লিটন দাস। ঐ সময় ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। লিটনকে নিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান মুশফিক। দিনের শেষ ওভারের আগে ৯৭ রানে পৌঁছে যান তিনি। সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে দাঁড়িয়ে মুশি। কিন্তু দিনের শেষ ওভারে চার বল খেলার সুযোগ পেলেও ২ রানের বেশি নিতে পারেননি মুশফিক। ফলে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে যান মুশি। ২ বাউন্ডারিতে ৮৬ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন। এই ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ৩ হাজার রান পূর্ণ করেন লিটন। মুশফিকের সাথে পঞ্চম উইকেটে ১৬০ রানে অবিচ্ছিন্ন ৯০ রান যোগ করেন লিটন। আয়ারল্যান্ড স্পিনার ম্যাকব্রিন দিনের ৪টি উইকেটই দখল করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাকে মাফ করে দিস বলে স্ত্রীকে ফোন, পরে মিলল যুবকের ঝুলন্ত লাশ
পরবর্তী নিবন্ধতারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ